সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারার পর পাকিস্তানের কাছেও সিরিজ হেরে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে গেছে ৯ থেকে ১০ নম্বরে। টানা চার ম্যাচ হারের ফলে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট কমায় এই পরিস্থিতি। এর আগে বার্ষিক হালনাগাদের সময় ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ নেমে আসে ১০ নম্বরে। টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়, বর্তমানে নবম স্থানে অবস্থান করছে টাইগাররা।
গতকাল লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটিং লাইনআপের অস্থিরতা এবং বোলিং ইউনিটের দুর্বলতা বাংলাদেশের পতনের বড় কারণ। তরুণ ক্রিকেটাররা চাপ সামলাতে পারছেন না, যার প্রভাব পড়ছে দলীয় পারফরম্যান্সে।
গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারিয়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল হতাশাজনক ফলাফল দিয়েছিল। এর ঠিক পরপরই পাকিস্তানের মাটিতে লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও মাঠে নেমে হারতে হয় তাদের। এই ধারাবাহিক পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশ রেটিং পয়েন্ট ২২৫ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২০-এ। এর ফলে আফগানিস্তান (২২৩ পয়েন্ট) বাংলাদেশকে ছাপিয়ে এগিয়ে গেছে।
আইসিসি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের দশ নম্বর অবস্থানটি অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ, ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শীর্ষ চার দলগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, যেখানে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতসহ অনেক শক্তিশালী দল ছিল। সেই সময় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কিন্তু বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে পড়েছে।
টানা চার ম্যাচে হারের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ব্যাটিং বিভাগের অবনতি। লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দল মাত্র ১৩৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা বর্তমান যুগের টি-টোয়েন্টিতে খুবই কম স্কোর। ব্যাটাররা বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় বোলাররাও নিজেদের ক্ষমতা পুরোপুরি দেখাতে পারেনি। অপরদিকে, পাকিস্তান তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সহজেই জয় নিশ্চিত করেছে।
অন্যান্য পরিসংখ্যান ও তথ্য:
- টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারত (২৭১ পয়েন্ট), দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়া (২৬২), এবং তারপর রয়েছে ইংল্যান্ড (২৫৪), নিউজিল্যান্ড (২৪৯) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২৪৬)।
- পাকিস্তান ৮ নম্বরে অবস্থান করছে, তাদের রেটিং পয়েন্ট এখন ২২৯।
- সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৫ নম্বরে রয়েছে এবং ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে।
- ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশও গতবারের মতো দশম স্থানে নেমে এসেছে, আর টেস্টে অবস্থান নবম।
বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যত কি?
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে নতুন করে সাজাতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও স্থায়ী সমাধান দরকার। বর্তমানে দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছু প্রতিভাবান তরুণের আবির্ভাব হলেও, তাদের প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ অভিজ্ঞতা।
নিরাপত্তা ও খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ কমাতে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া, এবং ক্রিকেটারদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করাও বড় বিষয়। কারণ, গত ৬-৭ মাস ধরে বেতন ঠিকমত না পাওয়ার খবরও দেশের ক্রিকেটকে প্রভাবিত করছে।
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা আশা রাখছেন, জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ও নতুন খেলোয়াড়রা মিলে দ্রুত ফিরে আসবে সাফল্যের পথে। আগামী ম্যাচগুলো, বিশেষ করে দেরি না করে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজগুলো বাংলাদেশের পুনর্জাগরণের জন্য সুযোগ হতে পারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত নির্ভর করছে সঠিক নেতৃত্ব, ধারাবাহিকতা ও নীতিমালা বাস্তবায়নের উপর। আইসিসির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনে টিকে থাকতে হলে টাইগারদের দ্রুত পরিবর্তনের পথ ধরে নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে হবে।