আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ

শিশুশ্রম নয়, শিশুর শৈশব ফেরাতে গড়ি একটুখানি আলোকিত বিশ্ব

New-Project-76.jpg

আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

রাস্তার পাশে চা বিক্রি করা ৯ বছরের রিয়াদ, বস্তিতে প্লাস্টিক কুড়িয়ে বেড়ানো ছোট্ট আফসানা, বা কারখানার ভেতরে মুখ গুঁজে কাজ করা শিশু রুবেল—এরা কেউ-ই স্কুলে যায় না, ছুটির ঘণ্টায় খেলাধুলা করে না, এমনকি নামও জানে না ‘শৈশব’ বলে কিছু একটা আছে। আজ ১২ জুন, আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস, কিন্তু বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর কাছে এই দিনটিও কেবল আরেকটি কাজের দিন, আরেকটি ক্লান্ত বিকেল।

বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি শিশু শ্রমের সঙ্গে যুক্ত, যাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ ও শারীরিক ক্ষতিকর কাজে জড়িত। দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব শিশুদের বাধ্য করছে পরিবারকে বাঁচাতে তাদের ছোট্ট দুটি হাত কাজে লাগাতে।

স্কুলব্যাগ নয়, তাদের হাতে কুলার, কাঠ, কিংবা ইট

অন্য শিশুরা যখন সকালে ব্যাগ কাঁধে করে স্কুলে যায়, তখন রিকশার পেছনে ঝুলে কোনো এক চায়ের দোকানে কাজ করতে ছুটে চলে পথশিশু লাবিব। ৮ বছর বয়সেই তার হাত চায়ের গ্লাসে পোকা ধরার আগে তা ধুয়ে ফেলার কাজ জানে, অথচ নিজের নাম লেখার মতো অক্ষর চেনে না।

তার মা বলে, “বাবা নাই, আমাগো খাইতে হয়। লাবিব না কামাইলে বাজার করা যায় না।”

এই গল্প শুধু লাবিবের নয়। এটি বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু শ্রমিকের বাস্তবতা। গ্রামে-শহরে, গার্মেন্টসে, বাসাবাড়িতে, মজুরিতে—সবখানেই ছড়িয়ে আছে এই অন্যায়।

‘শিশুশ্রম নয়, শিক্ষা চাই’—কিন্তু কে শুনবে তাদের কণ্ঠ?

প্রতিবছর এই দিনে সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজ নানা কর্মসূচি পালন করে। হয় আলোচনা, হয় পোস্টার, হয় ওয়েবিনার। কিন্তু রিকশার পেছনে বসা ছোট্ট ছেলেটার কাছে এসবের কোনো মানে নেই, কারণ সে জানেই না এই দিবস তারই জন্য।

বেসরকারি সংস্থা ‘চাইল্ডফেয়ার বাংলাদেশ’-এর নির্বাহী পরিচালক ফারহানা রশীদ বলেন, “শিশুশ্রম একদিনে বন্ধ হবে না, তবে প্রতিটি শিশু যদি অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতভাবে পায়, আর পরিবারকে সহায়তা করা যায়, তাহলে ভবিষ্যত বদলানো সম্ভব।”

আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হবে শৈশবকে

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রম পুরোপুরি বিলুপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর বাস্তবায়ন যে কতটা কঠিন, তা প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের প্রতিদিনের ছবি দেখলেই বোঝা যায়।

শিশুদের জীবন যেন কেবল কাজ নয়—হোক স্কুল, খেলা, স্বপ্ন ও স্বাধীনতা। হোক একটি মুক্ত শৈশব, যেখানে শিশুরা বেড়ে উঠবে আনন্দে, নিরাপদে এবং সম্ভাবনার আলোয়।
এই আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে আসুন, আমরা কেবল প্ল্যাকার্ড নয়—একটি সমাজ গড়ি, যেখানে প্রতিটি শিশু শ্রম নয়, ভালোবাসা ও শিক্ষায় বেড়ে উঠবে।

Leave a Reply

scroll to top