গত বছরের ৫ জুন বোয়িংয়ের মালিকানাধীন মহাকাশযান স্টারলাইনারে করে আট দিনের পরীক্ষামূলক মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন নাসার দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। মহাকাশযানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটদিনের সেই মিশন স্থায়ী হয়েছে প্রায় ৮ মাস এবং সেটা বাড়তে পারে আরও অনেক।
এদিকে মহাকাশ স্টেশনে আশ্চর্যজনক সাত মাস পার করার পর, হাঁটা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস। যেহেতু মহাকর্ষ বলের কারণে মহাকাশযানে হাঁটার প্রয়োজন পরে না অনেকটা উড়ে উড়েই চলাফেরা করা হয়। সেই হিসেবে গত সাত মাস ধরে হাঁটছেন না সুনিতা। যার ফলে পৃথিবীতে চলা স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে অনেকটা ভিন্নভাবেই অভস্ত হচ্ছে মহাকাশচারীদের দেহ। এই সমস্যার ফলে মহাকাশে ভ্রমণকারীদের শরীরে কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মঙ্গল গ্রহে এবং তার বাইরে আরও গভীরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার সাথে সাথে উইলিয়ামসের চিকিৎসা সংক্রান্ত অসুস্থতা অনেকেরই দ্বিতীয় চিন্তায় ফেলেছে মহাকাশ সংস্থাগুলি।
ভারতীয় বংশোদ্ভুত সুনিতা উইলিয়ামসে মহাকাশে ৭ মাস পরে কীভাবে হাঁটতে ভুলে যাওয়া একটি গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
সম্প্রতি মহাকাশ থেকে ছাত্রদের সাথে ভার্চুয়ালি কথোপকথনের সময় উইলিয়ামস জানিয়েছিলেন তিনি মনে করার চেষ্টা করছেন যে হাঁটতে কেমন লাগে। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভাসমান কয়েক মাস অতিবাহিত করার পরে, উইলিয়ামস বসে নেই বা শুয়ে নেই, এবং এখন, তিনি শক্ত মাটিতে হাঁটার অনুভূতি মনে করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। স্টারলাইনার মহাকাশযানে যা একটি স্বল্প-মেয়াদী মিশন হওয়ার কথা ছিল তা একটি টানা দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।
উইলিয়ামস এবং সহকর্মী নভোচারী বুচ উইলমোর মহাকাশে এক মাসের বেশি সময় কাটাবেন বলে আশা করেছিলেন, কিন্তু মিশনটি অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েক মাস ধরে প্রসারিত হচ্ছে। তাদের দুজনেই সেখানে আছেন ‘জিরো গ্র্যাভেটি’ বা ওজনহীন অবস্থায়। এই অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ ভ্রমণের বাস্তবতা উইলিয়ামসকে পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে। যার ফলে বর্ধিত মহাকাশ ভ্রমণের অব্যক্ত টোল সম্পর্কে উদ্বেগজনক প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববাসীর মনে।
স্পেসএক্স ক্রু -১০ লঞ্চ হতে দেরি হওয়ায় আইএসএস (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন)-এ থাকতে বাধ্য হয়েছেন সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাদের বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে যখন থেকে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে তখন থেকেই আইএসএসে আটকে রয়েছেন দুই মহাকাশচারী। বোয়িং এবং নাসা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে মহাকাশযানটি মেরামত করা এবং বিজ্ঞানীদের ফিরিয়ে আনা খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
২০২৪ সালের আগস্টে নাসা ঘোষণা করে যে তারা স্পেসএক্সের ক্রু-৯ ক্যাপসুল ব্যবহার করে উভয় মহাকাশচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। তবে, ক্রু-১০ মিশন চালু না হওয়া পর্যন্ত ক্রু-৯ ক্যাপসুলটি ফিরে আসতে পারবে না। আশা করা হচ্ছে যে উভয় মহাকাশচারী ২০২৫ সালের মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যেই নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।