আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর পশু কোরবানি করে। ঈদুল আজহার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য ও ত্যাগের পবিত্র স্মৃতি বহন করে। তাই মুমিনের জীবনে ঈদুল আজহা ও কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন” (সুরা কাউসার: ২)।
কোরআন ও হাদিস অনুসারে, ঈদুল আজহার সঙ্গে জড়িত রয়েছে গভীর ইতিহাস, যা শুরু হয় হজরত আদম (আ.)-এর পুত্র হাবিল ও কাবিলের প্রতিযোগিতামূলক কোরবানির মাধ্যমে। একজন আত্মিক পবিত্রতার জোরে সফল হন, অন্যজন লোভ ও প্রতিহিংসার কারণে পথভ্রষ্ট হন। কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের ঘটনা সঠিকভাবে বর্ণনা কর। তারা যখন কোরবানি পেশ করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হয়, অন্যজনের হয়নি। দ্বিতীয়জন বলল, ‘আমি তোমাকে হত্যা করব।’ প্রথমজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের কোরবানি কবুল করেন’” (সুরা মায়িদা: ২৭)।
এর ধারাবাহিকতায় হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময়ে পৌঁছায়। তিনি মহাপরীক্ষার সম্মুখীন হন। পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির জন্য উৎসর্গ করার দৃঢ় মনোবল ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অটল ঈমানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁর ত্যাগে আল্লাহ এতটাই সন্তুষ্ট হন যে, মুসলিমদের জন্য কোরবানির বিধান অপরিহার্য করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, “যখন ইসমাইল বাবার সঙ্গে চলাফেরার বয়সে পৌঁছাল, ইব্রাহিম বললেন, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। তোমার মতামত কী?’ ইসমাইল বললেন, ‘পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন’” (সুরা সাফ্ফাত: ১০২)।
এই ধারা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এবং সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য ঈদুল আজহায় কোরবানি ওয়াজিব করা হয়। পশু কোরবানি একটি প্রতীকী আচার। এর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জান-মালসহ সবকিছু উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারের অতুলনীয় ত্যাগের ইতিহাস মুমিনদেরকে আল্লাহর জন্য সবকিছু উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়।