ব্যর্থতার দায়ে অপসারণ:

কেন ফারুককে সরাল বিসিবি থেকে সরকার

New-Project-8-13.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মূলত পারফরম্যান্সজনিত ব্যর্থতার কারণে—এমনটাই জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শনিবার জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুক আহমেদকে অপসারণের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। বলেন, “এটা শাস্তি বা কোনো ব্যক্তি আক্রোশের বিষয় নয়। নতুন নেতৃত্বের কাছ থেকে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, গত ৯ মাসে তা পূরণ হয়নি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দৃশ্যমান উন্নতি, কিন্তু সেটা হয়নি।”

আসিফ মাহমুদের ভাষায়, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু এরপর থেকেই পারফরম্যান্সে এক ধরনের অবনমন দেখা যায়। “ক্রিকেটে যে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল, তারা দুঃখজনকভাবে সাফল্য দেখাতে পারেনি,” বলেন তিনি।

ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও, বিপিএল কেন্দ্রিক অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে। ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, “সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে ফারুক আহমেদের সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ‘দুর্বার রাজশাহী’ দলটিকে যেভাবে বিতর্কিতভাবে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধে সরকারের হস্তক্ষেপ লাগায়—তা লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ওই দলের বেতন দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এমনকি বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, পরিস্থিতি বিব্রতকর হওয়ায় তাকে আনা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই সভাপতির বিপক্ষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (NSC) অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। উপদেষ্টা জানান, “ক্রিকেট বোর্ডে কোনো টিমওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি। যারা ৫ আগস্টের আগের ‘ফ্যাসিবাদী’ প্রশাসনের সহযোগী ছিলেন, তারা অনেকেই পালিয়ে গেছেন। আর যারা আছেন, তারা ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন না।”

ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ফারুক আহমেদকে সরকার পক্ষ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। এটা এমন নয় যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। এটা পুরোপুরি পারফরম্যান্সনির্ভর একটি পরিবর্তন। খেলোয়াড় যদি খারাপ খেলে, তাকে বাদ দিতে হয়। তেমনি নেতৃত্বও যদি ব্যর্থ হয়, তখন পরিবর্তন দরকার।”

সরকার সরাসরি বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদকে অপসারণ করেনি, বরং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তার পরিচালকের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “বিসিবির সভাপতি নির্বাচনের দায়িত্ব বোর্ড পরিচালকদের। আমরা কেবল পরিচালকের মনোনয়ন পরিবর্তন করেছি। সেই পরিবর্তনের ভিত্তিতে বোর্ড গঠনতন্ত্র ও আইসিসি গাইডলাইনের আলোকে নতুন সভাপতিকে নির্বাচিত করেছে।”

ফারুক আহমেদকে সরিয়ে বিসিবির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। শুক্রবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাকে সর্বসম্মতভাবে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ফারুক আহমেদকে সভাপতি করেছিল সরকার। ৯ মাস পর তার স্থানে এসেছে এই বড় পরিবর্তন।

Leave a Reply

scroll to top