মূল্যবান জমিতে অসম্পূর্ণ ভবন, মাদকের আড্ডা – পাঠদানে ঝুঁকি স্কুলে

New-Project-15.jpg

স্কুলের অসম্পূর্ণ ভবন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর কার্যাদেশ পেয়ে স্কুল ভবনের কাজ শুরু করে মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজ। ২০২১ সালের ৩ জুলাই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, একই বছরের ২৪ জুন সর্বশেষ বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা পালিয়ে যান। ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ভবনটির ৮০-৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঠিকাদার কাজের তুলনায় বেশি বিল উত্তোলন করেছেন। বর্তমানে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনটি রাতে মাদকের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মাদকসেবীরা এসে সেখানে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ভবনেই পাঠদান চলছে। সামান্য বৃষ্টিতেই শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। আবার শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক সময় পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। একটি ছোট রুমে গাদাগাদি করে বসেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা। এ নিয়ে বারবার শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশঙ্কা

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন—পুরোনো ভবনটি এতটাই জরাজীর্ণ যে, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান বলে জানান পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক। এছাড়াও, মাদকসেবীদের বিচরণের কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছর আগে আকুয়া মোড়লপাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের দানের ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৩ শতাংশ জমি। গ্রামের নাম অনুসারে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় ‘আকুয়া মোড়লপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকা উত্তোলন করে ঠিকাদার। অভিযোগের পর গত তিন বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে চিঠি চালাচালি চললেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আকুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।

সরেজমিনে পরিস্থিতি

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ির নিচে মাদকসেবনের নানা উপকরণ পড়ে আছে। দ্বিতল ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলোতে রাতে চলে মাদকের আড্ডা। বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩১৪ জন। জরাজীর্ণ একতলা ভবনের তিনটি কক্ষে দুই শিফটে পাঠদান চলছে। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকসেবীরা আসায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় সংগঠনের অভিযোগ

সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ও আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, কাজটি সমাধানের জন্য আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। সদিচ্ছা থাকলে এতদিন স্কুলের কাজ বন্ধ থাকতো না। এখন ভবনটি মাদকসেবীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।

ঠিকাদার ও প্রশাসনের বক্তব্য

এ বিষয়ে মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, করোনার কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে তার প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে এই প্রকল্পে। এছাড়া সদর উপজেলার অন্য একটি প্রকল্পে তার প্রায় ৩০ লাখ টাকা আটকে আছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “আমি এখন দেউলিয়া। তবে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এসব কাজ সমাধান হোক, এটাই চাই।”

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। হিসাব-নিকাশ করে ঠিকাদারকে জরিমানা করা হবে। জরিমানা আদায় করে টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে দ্রুততম সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা হবে।

Leave a Reply

scroll to top