ঢাবির ভর্তিতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থান-ভুক্ত পরিবার, উঠছে বিতর্ক

New-Project-17-7.jpg

ঢাবির ভর্তি

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ ঢাবি প্রতিনিধি

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সম্মান জানাতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কোটা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে কেউ দেখছেন ইতিহাস ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে, আবার কেউ একে বলছেন অপ্রয়োজনীয় প্রতীকী রাজনীতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটা সুবিধাটি শুধুমাত্র ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রযোজ্য এবং তা শুধু আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের ভর্তি কার্যক্রমে প্রযোজ্য হবে। কোটার আওতায় শহীদ বা আহত ব্যক্তিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা— এবং তাঁদের অনুপস্থিতিতে সহোদর ভাইবোনরা আবেদন করতে পারবেন। তবে, কোটায় সুযোগ পেতে হলে অন্যান্য প্রার্থীর মতো লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যান্য কোটার মতোই এটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তার অতীত ভূমিকার প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বহু শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হন, যাদের আত্মত্যাগ এখনো যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ সেই অবহেলিত পরিবারগুলোর প্রতি সম্মান জানাতে একটি সাহসী পদক্ষেপ বলেই অনেকে মনে করছেন।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “এই কোটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং আপাতত এক বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। ভবিষ্যতে এটি চালু থাকবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তচিন্তার পক্ষে ছিল এবং থাকবে। আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তবে শিক্ষার্থী মহলে এ নিয়ে স্পষ্ট মতভেদ রয়েছে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম রাব্বি বলেন, “আমরা অনেকেই জানিই না ২৪ জুলাইয়ে কী ঘটেছিল। এমন একটি সিদ্ধান্ত তরুণদের ইতিহাস জানার আগ্রহ বাড়াবে এবং দায়িত্ববোধও তৈরি করবে।”

বিপরীতমুখী মত প্রকাশ করেছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাফিদ। তিনি বলেন, “আন্দোলনের উত্তরসূরিদের জন্য কোটা চালু করা হলে তা এক ধরনের প্রতীকী রাজনীতির জন্ম দিতে পারে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, সেখানে অতীতের ভিত্তিতে কোটা দিলে মেধার মূল্যায়ন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”

ঢাবির এই সিদ্ধান্ত নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি ইতিহাস ও মানবিকতার প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচায়ক, না কি বর্তমান বাস্তবতায় নতুন বৈষম্যের সূত্রপাত— সে প্রশ্ন এখন শিক্ষাঙ্গনের নানা স্তরে আলোচনার কেন্দ্রে।

Leave a Reply

scroll to top