চলতি বছরের হজ মৌসুমে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও অতিরিক্ত গরমের কারণে এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৪ মে মক্কায় মৃত্যুবরণ করেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মো. সাহেব উদ্দিন (৬৯) — (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল সূত্রে সোমবার (২৬ মে) জানা যায়, মৃত্যুবরণকারী হজযাত্রীদের মধ্যে চারজন মক্কায় এবং ছয়জন মদিনায় মারা যান। এ বছর হজ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথম মৃত্যু ঘটে গত ২৯ এপ্রিল, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মো. খলিলুর রহমান (৭০)-এর। এরপর একে একে আরও ৯ জন হজযাত্রী মারা যান।
মৃত্যুর তালিকা অনুযায়ী:
- ২৯ এপ্রিল: মো. খলিলুর রহমান (৭০), রাজবাড়ী
- ২ মে: মো. ফরিদুজ্জামান (৫৭), কিশোরগঞ্জ
- ৫ মে: আল হামিদা বানু (৫৮), পঞ্চগড়
- ৭ মে: মো. শাহজাহান কবির (৬০), ঢাকা
- ৯ মে: হাফেজ উদ্দিন (৭৩), জামালপুর
- ১০ মে: বয়েজ উদ্দিন (৭২), নীলফামারী
- ১৪ মে: মো. অহিদুর রহমান (৭২), চট্টগ্রাম
- ১৭ মে: মো. জয়নাল হোসেন (৬১), গাজীপুর
- ১৯ মে: আ. হান্নান মোল্লা (৬৩), চাঁদপুর
- ২৪ মে: মো. সাহেব উদ্দিন (৬৯), রংপুর
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর সৌদি আরবে গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এই চরম গরম ও তীব্র সূর্যতাপে দীর্ঘ সময় ধরে খোলা জায়গায় অবস্থান হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়ে গেছে।
সৌদি আরবের হজ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, হজ পালন করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তার মরদেহ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় না; বরং সৌদি আরবেই ধর্মীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক হজযাত্রীর দাফন এরই মধ্যে মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ হজে অংশ নিচ্ছেন। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ১৪ জুন (৮ জিলহজ) থেকে। কিন্তু তার আগেই বয়স্ক ও অসুস্থ হজযাত্রীদের মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি সতর্কতা ও সমন্বয়ের দাবি জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সৌদি আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য হজযাত্রীদের মধ্যে আগে থেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি, পর্যাপ্ত ওষুধ ও পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং আবহাওয়াজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করা উচিত ছিল।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি হজ মিশনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানো হয়েছে এবং প্রতি হজযাত্রীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সহায়তার আওতায় রাখা হচ্ছে। তবে দিন দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকায় হজের মূল রুটিন শুরু হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।