টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা করবেন না ড. ইউনূস

New-Project-2025-06-13T165713.848.png
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বর্তমান লন্ডন সফরে লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে, প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যেহেতু এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া, তাই তিনি এতে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে চান না।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার খালা, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে অবৈধভাবে জমি গ্রহণের অভিযোগ এনেছে। লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ এনেছেন।

টিউলিপ এক চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করে উল্লেখ করেন যে, এই সাক্ষাৎ ‘ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে সহায়ক হতে পারে।’

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূসকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি চলতি সফরে টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কিনা। জবাবে ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, “না, করব না। কারণ এটা আইনি প্রক্রিয়া। আমি আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে চাই না। প্রক্রিয়াটি চলতে থাকুক।”

টিউলিপ যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেয়নি এবং তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি আদালতের বিষয়। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে মামলা চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে কিনা অথবা তা বাতিল করা হবে।” বাংলাদেশের প্রসিকিউটরদের আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং টিউলিপকে অপরাধের প্রমাণ দেওয়া উচিত কিনা – এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইউনুমার্স বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দুদকের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে এবং তারা সঠিক কাজটিই করছে।”

যদি টিউলিপ বাংলাদেশে কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার প্রত্যর্পণ চাওয়া হবে কিনা – এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যদি এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তবে অবশ্যই।”

এদিকে, এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক জানান যে, ড. ইউনূস দেখা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি হতাশ। তিনি বলেন, “কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) এ প্রতিহিংসার কেন্দ্রে রয়েছেন।” টিউলিপ আরও বলেন, “আমি আশা করি তিনি এখন সংবাদমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেবেন। আদালতকে এটা প্রমাণ করার সুযোগ দেবেন যে, তাদের তদন্তের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।”

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অর্থের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি জানি না, আমার হতাশ হওয়া উচিত নাকি তার (স্টারমার) হতাশ হওয়া উচিত। এটা এক ধরনের মিসড অপরচুনিটি (হাতছাড়া হওয়া সুযোগ)।”

এসময় স্টারমারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এলে সুযোগ হতো বিশ্রাম করে পরিস্থিতি দেখার ও অনুভব করার।” প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সাক্ষাৎসূচি স্থির না করার কারণ ব্যাখ্যা করেছে কিনা – এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা এ ধরনের কোনো ব্যাখ্যা পাইনি। সম্ভবত তিনি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত।”

বিবিসি জানতে পেরেছে, আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সমন্বয় কেন্দ্র (আইএসিসিসি) হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার সুযোগ খুঁজছে।

Leave a Reply

scroll to top