গরুর নাকে দড়ি কেন পরানো হয়? ইসলামে এর বিধান কী?

New-Project-52.jpg

গরুর নাকে রশি কেন পরানো হয়?

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় গরুর নাকে রশি লাগিয়ে চালানোর দৃশ্য খুবই পরিচিত। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় হাটে যাওয়া, কোরবানির পশু ঘোরানো কিংবা গৃহপালিত গরুকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নাকে রশি লাগানো একটি সাধারণ চিত্র। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—এই প্রক্রিয়াটি কি পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা? ইসলামে কি এটি জায়েজ?

নাকে রশি লাগানোর কারণ

গরু একটি বড় এবং শক্তিশালী প্রাণী। অনেক সময় গরু হঠাৎ ছুটে যেতে পারে, উত্তেজিত হয়ে মানুষকে আঘাত করতে পারে। এ কারণে গরুকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নাকের মাঝখানে ছোট একটি ছিদ্র করে সেখানে একটি দণ্ড বা রশি লাগানো হয়, যেটি “নাকের রশি” নামে পরিচিত। এটি একধরনের হালকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যাতে পশুকে সহজে টানা ও চালানো যায়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহৃত হয় পশুর নিরাপত্তা এবং আশেপাশের মানুষের সুরক্ষার জন্য।

প্রাপ্তবয়স্ক গবাদি পশুরা অনেক সময় আক্রমণাত্বক হয়ে উঠে। নাক পশুর সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলির মধ্যে একটি। নাকের উপর চাপ প্রয়োগ করে, সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়িয়ে গরুকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যাতে আঘাত বা ব্যাঘাতের ঝুঁকি কম থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এই বিষয়টি

ইসলামে পশুর প্রতি দয়াশীলতা ও করুণা প্রদর্শনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। হাদীসে এসেছে, “পশুর প্রতি দয়ালু হও, কারণ তাদের ওপরও তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে।”
(সহীহ মুসলিম)

তবে ইসলাম পশুকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেনি—বরং নির্যাতন না করে যত্ন ও সহানুভূতির সাথে ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছে।

নাক ফুঁড়ে রশি লাগানো কি বৈধ?

অনেক ইসলামি গবেষক ও আলেমের মতে, যদি গরুর নাকে ছিদ্র করা হয় শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য, এবং তা পশুর প্রতি অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা সৃষ্টি না করে—তাহলে তা জায়েজ (বৈধ)। এটি পশু পরিবহন, হাটে চলাচল বা কোরবানির সময় সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি প্রয়োজনে গৃহীত ব্যবস্থা।

তবে যেখানে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে (যেমন মুখের বেঁধন, শরীরের দড়ি ব্যবহার), সেখানে নাক ফুঁড়ে রশি লাগানো না করাই উত্তম বলে মত দিয়েছেন অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ।

নিষিদ্ধ কখন হবে?

যদি কখনো গরুর নাকের ছিদ্র বড় করে দেওয়া হয় অকারণে। অথবা পশুকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। ইনফেকশন বা আঘাত হওয়ার পরও সেটি চালিয়ে যাওয়া হয়, এসব পরিস্থিতিতে ইসলাম এটি নিষিদ্ধ বা গুনাহ হিসেবে গণ্য করে।

গরুর নাকে রশি লাগানো মূলত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে এবং ইসলামও এই প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে অনুমোদন দেয়—যতক্ষণ না এটি নির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা ও যত্নশীল ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। প্রতিটি প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই ইসলামের মূল শিক্ষা।

Leave a Reply

scroll to top