জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে টানা প্রায় ৫০ ঘণ্টার আন্দোলন শেষে তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে এসব দাবি পূরণে বিশেষ একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে
এই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্যের নেতৃত্বে আরও থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি। তবে কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন আরও সদস্য নিতে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণ ও কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ যাতে দ্রুত হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
গতকাল শনিবার (১৭ মে) ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কাজ দ্রুত করা হবে। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, দাঁড়ানোর জায়গা নেই, বসা যায় না। এভাবে একটি ক্যাম্পাস চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, আশ্বাস অনুযায়ী দাবি পূরণের কাজ শুরু হয়েছে। জবি উপাচার্যকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হল নির্মাণের বিষয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ও ডিজাইন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জবি উপাচার্যের বক্তব্য
এ ব্যাপারে জবি উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, আবাসিক হলের প্রকল্প প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন তারা। সরকার অনুমোদন দিলে নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করবে। খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে।
সূত্র জানায়, আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকরের বিষয়ে সরকার একমত নয়। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এমন নজির নেই।
তবে এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ইউজিসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ও নৈতিক দাবিগুলো সরকার পূরণ করবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও কেন বুঝে পায়নি, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি খতিয়ে দেখবে বলে আশা করি। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। সব পক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প। অর্থাৎ, মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে নির্মাণ প্রকল্পের অংশ বিশেষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হলে একনেক দ্রুত অনুমোদন দেবে।
উল্লেখ্য, ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা চার দিন আন্দোলন করেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি এতে যোগ হয়। এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক ফায়েজ গিয়ে দাবি পূরণের ঘোষণা দেন এবং শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।