ঢাবিতে হিজাবকে ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ ঘোষণা বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের

New-Project-8-11.jpg

হিজাবকে ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ ঘোষণা

ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরা শিক্ষার্থীদের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদে হিজাবকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতীক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত ‘Celebrating Women’s Dignity and Pride 2025’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সুফিয়া কামাল হল থেকে বিতাড়িত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাবেক নেত্রী মরিয়ম জামিলা তামান্না। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হিজাব পরা শিক্ষার্থীরা কেবল ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করছেন না, বরং তারা প্রতিদিন প্রতিরোধ করছেন এক বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

বিতরণ করা হয় ৫০০ হিজাব

আয়োজনে প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার নিবন্ধিত ছাত্রীদের মধ্যে পাঁচ শত জনকে হিজাব বিতরণ করা হয়। ‘প্রতিরোধ ও সম্ভ্রমের প্রতীক’ হিসেবে হিজাব তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কলম ও চকলেট বিতরণ করা হয়। আয়োজকেরা জানান, পরবর্তী ধাপে হিজাব বণ্টন সম্পূর্ণ করা হবে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিনেই নিকাব পরায় এক শিক্ষক আমাকে অপমান করেন। ভাইবা বোর্ড ও পরীক্ষার সময় আমাকে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়।” তিনি জানান, “আজ আমি প্রতিবাদ করতে পারছি, কারণ ফ্যাসিবাদ এখন দুর্বল হয়েছে।”

বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নাফিসা ইসলাম সাকাফি। তিনি বলেন, “নারীদের অধিকার আদায়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা অপরিহার্য। প্রতিবাদ কেবল পুরুষের কাজ নয়, নারীরাও সমানভাবে অংশী।”

‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবফোবিয়া ইন ডিইউ’ সংগঠনের সদস্য হাবিবা মাহজাবিন জ্যোতি বলেন, “হিজাব মুসলিম নারীর পরিচয়ের অংশ, কিন্তু একে জঙ্গিবাদের প্রতীক বানিয়ে দেশে হিজাববিরোধী মানসিকতা তৈরি করা হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের মর্যাদা তুলে ধরে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: হিজাব সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি, সুদমুক্ত শিক্ষাঋণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, নারীবান্ধব পরিবহন, এবং সম্পত্তিতে ইসলামী অধিকার বাস্তবায়ন।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন বলেন, “হিজাব এখন কেবল পর্দার প্রতীক নয়, এটি এক প্রতিরোধের ভাষা। রাষ্ট্রের উচিত হিজাব পরা ছাত্রছাত্রীদের সম্মান করা, তাদের যেন কোনো শিক্ষক বা প্রশাসন অপমান না করতে পারে। এই আয়োজন সেই সব সাহসী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, যারা নিপীড়নের মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থেকেছেন।”

উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এ গাউস, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর শায়খুল হাদিস আহমদ আলী কাসেমী, গবেষক মূসা আল-হাফিজ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন ইরা, এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

দিনব্যাপী আয়োজনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন, যাতে লেখা ছিল—‘হিজাব হোক প্রতিরোধের প্রতীক’, ‘আমার সোনার বাংলায় হিজাব বৈষম্যের ঠাঁই নেই’। আয়োজকদের মতে, এই অনুষ্ঠান হিজাববিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত প্রতিবাদ এবং নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বলিষ্ঠ উচ্চারণ।

Leave a Reply

scroll to top