কালো টাকা বৈধ করার সুযোগকে সৎ করদাতাদের সঙ্গে ‘চরম বৈষম্যমূলক আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমন সুযোগ রাখা করব্যবস্থায় ন্যায়বিচার নষ্ট করবে এবং অসাম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বাজেটে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা নিয়মিত করদাতাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ। এটি শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, নৈতিক বৈষম্যও তৈরি করছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। অথচ আজ আমরা বৈষম্যকে উৎসাহ দিচ্ছি। যাঁরা সৎ পথে আয় করেন, তাঁদের প্রতি এটি নিরুৎসাহনমূলক এবং অসৎ উপার্জনের বৈধতা দেয়।”
সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এ ধরনের সুযোগ রাজস্ব আহরণে তেমন ভূমিকা রাখবে না। বরং মানুষ কর ফাঁকিতে উৎসাহিত হবে। ফাহমিদা বলেন, “রাজস্ব বাড়াতে হলে কর ব্যবস্থায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে কিছু প্রস্তাবকে সিপিডি ইতিবাচকভাবে দেখেছে। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, ব্যাংকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, এবং কৃষি খাত থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর করমুক্ত সুবিধা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়।
এছাড়া চিনি আমদানিতে কর কমানো ও তামাকপণ্যে ২.৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপ এবং ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকেও সিপিডি স্বাগত জানিয়েছে।
সংস্থাটি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, কালো টাকা বৈধ করার নীতি পরিহার করে একটি ন্যায়সঙ্গত ও আধুনিক কর কাঠামো গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।