‘শৃঙ্খলার নামে দমন নয়’, কর্মবিরতিতে সরকারি চাকরিজীবীরা

New-Project-44-1.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

সচিবালয়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে এ কর্মসূচি কার্যকর হবে।

বুধবার সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর বলেন, “আমরা কাল থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করব। জরুরি সেবাগুলোর ক্ষেত্রে সময় কিছুটা কম হতে পারে।”

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে গত রোববার রাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সেখানে নতুন করে ‘৩৭ক’ ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর পদাবনতি, বরখাস্ত বা অপসারণের বিধান রাখা হয়েছে।

এ ধারায় উল্লেখ করা হয়, কেউ যদি এমন কোনো কাজ করেন যা “অনানুগত্যের সামিল” বা অন্যদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দিকে উসকে দেয় কিংবা একসঙ্গে কর্মবিরতি পালন করেন, তবে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

এই ধারা এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

আলোচনার উদ্যোগ ও কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে কয়েকজন সচিবের সঙ্গে আন্দোলনরতদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভূমি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফর শেষে দেশে ফিরলে বিষয়টি তাঁর কাছে উপস্থাপন করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ভূমি সচিব এ এসএম সালেহ আহমেদ জানান, “প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে।”

এই প্রাথমিক আশ্বাসের ভিত্তিতে বুধবারের পূর্বঘোষিত আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়। তবে ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি ধাপে ধাপে চলবে।

বাদিউল কবীর বলেন, “অধ্যাদেশ বাতিল নিয়ে ইতিবাচক কিছু আভাস মিলেছে। তবে পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”

গত শনিবার অধ্যাদেশের প্রতিবাদে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর রোববার রাতেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়। সোমবার ও মঙ্গলবারও সচিবালয়ে ব্যাপক কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ চলে।

এখন আন্দোলনকারীরা বলছেন, সংশোধন নয়—অধ্যাদেশ সম্পূর্ণ বাতিল করলেই তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন।

সরকারি চাকরি আইনের সাম্প্রতিক এই সংশোধনী এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মীদের টানা আন্দোলন দেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় নতুন করে এক উত্তেজনার আবহ তৈরি করেছে। আন্দোলন কী দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর।

 

Leave a Reply

scroll to top