ঢাকাই সিনেমার একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি এক দশক আগে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন। রুপালি পর্দা ছেড়ে ইসলামি জীবনযাপনের পথ বেছে নিয়ে তিনি বিয়ে করেন মুফতি মোহাম্মদ তালহা নামে একজন মাদরাসা শিক্ষককে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি প্রকট হয়েছে। স্বামীর বিরুদ্ধে মারধর, একাধিক বিয়ে এবং অন্যান্য অভিযোগ তুলে নাজনীন আবারও আলোচনায় এসেছেন। এই ঘটনাগুলো এখন আইনি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।

চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে নাজনীন আক্তার হ্যাপি জীবনের এক কঠিন সময় পার করছেন। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস এই কঠিন পরিস্থিতিরই ইঙ্গিত বহন করে। শুক্রবার (২৩ মে) তিনি একটি পোস্টে দেশের আলেম-ওলামাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন,
“এই দেশে কি কোনো হক্কানী ওলামা নেই? আমাকে এই আলিম নামের জালিম থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে বাঁচান! আগেও অনুরোধ করেছি, এখনো করছি। আপনারা সবাই কেন চুপ করে আছেন? আমি যে মাজলুম, এটা কেন মানছেন না? আমার অতীতের কারণে? যা তওবাকৃত। আপনারা কিছুই করতে পারছেন না?”
নাজনীন আরও বলেন, “আমাকে মুক্ত করে দিন, দয়া করে। সে আমাকে ঝুলিয়ে রাখতে রাখতে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আপনাদের একজন আলেমের কুকর্ম ঢাকার জন্য আমার অতীত নিয়ে কটাক্ষ করছেন। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে পারবেন? আপনাদের কোনো দায়িত্ব ছিল না? আমি অনেকদিন ধরে এসব বলে আসছি, মামলা করার আগে থেকেই।” তিনি তার স্বামী মুফতি মোহাম্মদ তালহার বিরুদ্ধে নয়টি বিয়ের অভিযোগ তুলেছেন এবং অন্য একটি পোস্টে নয় স্ত্রীর নাম, ঠিকানা ও বিয়ের কাগজপত্র প্রকাশ করেছেন।

চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি ও তার স্বামী তালহা। ছবি: সংগৃহীত
গত ১২ মে নাজনীন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ১৪ মে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস এ তথ্য জানান। মামলার পর থেকে নাজনীন অনেকের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি একটি পোস্টে বলেন, “আমি যে যৌতুক মামলা করেছি, সেটা নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। আইনের ভাষায় অর্থ দাবিকে যৌতুক বলা হয়। তিনি তার রেস্টুরেন্টের নতুন ব্রাঞ্চ খোলার জন্য আমাকে টাকা দিতে চাপ দিয়েছেন এবং দিতে না পারলে তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তালাক নিলেও তিনি আমার সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতেন। আমার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য আমি এসব হুমকি সহ্য করেছি। আমি জানি তার চরিত্র কেমন। তাই কোনোভাবেই আমার সন্তানকে তার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না।”

চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি ও তার স্বামী তালহা। ছবি: সংগৃহীত
নাজনীন আক্তার হ্যাপির চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর তিনি বদরুল আমিনের ‘রিয়েলম্যান’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’, মেজবাহ শিকদারের ‘অন্যরকম’, এবং জামশেদুর রহমানের ‘ছন্দপতন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন। রুপালি জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ইসলামি জীবনযাপনের পথ বেছে নেন এবং মুফতি মোহাম্মদ তালহার সঙ্গে বিয়ে করেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং আইনি লড়াই তাকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।

চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি। ছবি: সংগৃহীত
নাজনীনের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টগুলো তার মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক সহযোগিতার প্রতি আকুতি প্রকাশ করে। তিনি আলেম সমাজের কাছে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন, এবং তার অতীত জীবনের তওবার কথা উল্লেখ করে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার এই সংগ্রামী জীবনের গল্প এখন অনেকের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।