সেই ছেলেটি, যার ব্যাট থেমেছিল অসময়ে…

New-Project-57.jpg

মানজারুল ইসলাম রানা

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

আজ ৪ মে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অসমাপ্ত অধ্যায়ের নাম মানজারুল ইসলাম রানা—আজ তার জন্মদিন। ১৯৮৪ সালের এই দিনে খুলনার মুজগুন্নিতে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেটি নিজের নিষ্পাপ হাসি, পরিশ্রম আর প্রতিভা দিয়ে অল্প সময়েই ছুঁয়ে গিয়েছিল কোটি ভক্তের হৃদয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ, এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে যায় তার জীবন। সময় তখন মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন। দেখতে দেখতেই কেটে গেছে রানার চলে যাওয়ার ১৮ বছর।

স্বপ্ন দেখা চোখের গল্প

রানা ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, বাঁহাতি স্পিনার—একজন নিঃস্বার্থ টিমম্যান। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেকেই তুলে নেন মাইকেল ভনের উইকেট। এ যেন এক তরুণের বিশ্বমঞ্চে সাহসী ঘোষণা—“আমি এসেছি।”

২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে পরপর দুই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন, এটা কোনো সৌভাগ্য নয়—এটা ছিল যোগ্যতার দাবি। তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৪/৩৪। সেই সিরিজে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আর ব্যাট হাতে? চুপচাপ, কিন্তু কার্যকর।

শেষ ওভারটা লেখা হয়নি আর…

২০০৭ সালের এক নিস্তব্ধ বিকেল। খুলনার কার্তিকডাঙ্গায় সেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিভে যায় একটি সম্ভাবনার আলো। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে মারা যাওয়া টেস্ট ক্রিকেটার। তার মৃত্যু যেন কেবল একজন খেলোয়াড়ের প্রস্থান নয়, ছিল এক জাতির হৃদয়ভাঙা অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ছয়টি টেস্ট ও ২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের জিম্বাবুয়ে সফরে রানা ওয়ানডে সিরিজে দুইবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। জাতীয় দলের হয়ে ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন রানা। এরপর অফ ফর্মের কারণে ছিটকে যান দলের বাইরে। তবে হাল ছাড়েননি। জাতীয় দায়িত্বে ফেরার জন্য করে যাচ্ছিলেন নিয়মিত অনুশীলন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হয়েছে তাকে।

যার নাম বলতেই বুক কেঁপে ওঠে

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রতি বছর ৪ মে রানার জন্মদিনে তাকে স্মরণ করে। তার সতীর্থরা আজও বলেন, “রানা ছিল দলের প্রাণ। তার হাসি আমাদের অনুপ্রেরণা দিতো।”

শেষ কথায়…

মানজারুল ইসলাম রানা ছিলেন না কোনো ‘সুপারস্টার’, কিন্তু ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ সৈনিক। যিনি খেলতেন দেশের জন্য, হাসতেন সতীর্থদের জন্য, আর লড়তেন নিজের জায়গার জন্য।

আজ, তার জন্মদিনে, আমরা বলি— “যেখানে থেমে গেছে রানার ব্যাট, সেখান থেকেই জন্ম নেয় প্রতিটি তরুণ ক্রিকেটারের স্বপ্ন। তুমি নেই রানা, কিন্তু আমরা তোমাকে ভুলি না।” চিরশ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কান্নাভেজা জন্মদিনের শুভেচ্ছা—মানজারুল ইসলাম রানা।

Leave a Reply

scroll to top