“বাবা, এবার ঈদে কিন্তু আমাকে নতুন জামা কিনে দিতে হবে, আর মেহেদীও আনতে ভুলবে না…” শুক্রবার রাতে বাবার গালে চুমু দিয়ে এভাবেই আবদার করেছিল ছোট্ট মেয়ে নিলিফা। আজ সেই মেয়ের নিথর দেহ বুকের মধ্যে চেপে ধরে বিলাপ করে কাঁদছিলেন বাবা ইসরাফিল। আর কোনদিন সে আবদার শোনা হবে না—এই বেদনাই যেন বাবার হৃদয় চিরে আসছিল।
শনিবার (৩১ মে) দুপুর ২টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার পালশা ইউনিয়নের চাটশাল বিলপাড়া এলাকায় পুকুরে ডুবে মারা যায় সাত বছরের শিশু নিলিফা আক্তার মিম।
নিলিফার মা সন্তান জন্ম দিতে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। সঙ্গে করে এনেছিলেন বড় মেয়ে মিমকে। সদ্যোজাত ছোট ভাইকে দেখতে বাবা এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। ফিরে যাওয়ার সময় আদরের মেয়েকে সঙ্গে নিতে চাইলেও মিম বায়না ধরেছিল, “আমি মায়ের সঙ্গে আরও ক’দিন থাকতে চাই।” মেয়ের সে ছোট্ট আবদার রাখতে না পেরে বাবা ফিরে গিয়েছিলেন একা। কে জানত, সেটাই হবে মেয়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা!
শনিবার দুপুরে নানাবাড়ির পাশে একটি পুকুরে সমবয়সী কয়েকজন শিশুর সঙ্গে গোসল করতে নামে মিম। কিন্তু সাঁতার না জানায় সে পানির গভীরে তলিয়ে যায়। তার সঙ্গে ছিল আট বছরের আরেক শিশু কারিমা আক্তার, সেও ডুবে গিয়েছিল। তবে ভাগ্যক্রমে কারিমা বেঁচে ফিরে এলেও মিমকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
নিহত নিলিফা আক্তার মিম দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বড় গোপালপুর গ্রামের ইসরাফিলের মেয়ে এবং বড় গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার সঙ্গে ডুবে যাওয়া কারিমা আক্তার উপজেলার চাটশাল গ্রামের শফিকুরের মেয়ে। সম্পর্কে তারা খালা ও ভাগ্নি। কারিমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে পরে তার জ্ঞান ফিরে আসে এবং বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুরে কয়েকজন শিশু খেলতে খেলতে পুকুরে গোসল করতে নামে। হঠাৎই পুকুরে ডুবে যেতে দেখে আরেক শিশু চিৎকার শুরু করে। স্থানীয় লোকজন দ্রুত এসে উদ্ধার অভিযানে নামে। তখনই নিখোঁজ শিশুদের একজনকে মৃত এবং অন্যজনকে অচেতন অবস্থায় পানিতে পাওয়া যায়।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, ঘটনাটি একটি অপমৃত্যু। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই শিশুটির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিলিফার বাবা আর মেয়ের জামা কিনবেন না, মেহেদীও আনবেন না… ঈদ এবারও আসবে, কিন্তু ছোট্ট মিমের জন্য ঈদের কোনো আনন্দ আর থাকবে না। থাকবে শুধু স্মৃতি, কান্না আর অপূরণীয় শূন্যতা।