কিশোরগঞ্জ হাওর: মুগ্ধতায় ভাসছে ২০ হাজার প্রাণ

পর্যটকের ঢল

কিশোরগঞ্জ হাওরে পর্যটকের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক অনন্য খান সাদিক

কিশোরগঞ্জের বালিখলা, মিঠামইন হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাওরজুড়ে ভীড় করছেন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক। অতিরিক্ত গরমেও থেমে নেই তাদের আগমন। বিশাল জলরাশি ও হাওরের দিগন্ত ছোঁয়া অপরুপ দৃশ্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। তাদের আগমনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন হাওরে কর্মজীবী প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ।

গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুর থেকে বালিখলা, মিঠামইন এলাকা ঘুরে পর্যটকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি পেয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এখানে বেড়াতে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাদের আগমনে উপজেলার কয়েক হাজার মাঝিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মধ্যে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে মিঠামইন-নিকলী বেড়িবাঁধ। ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত বা ছুটি কাটাতে কিশোরগঞ্জের এ বেড়িবাঁধ এলাকায় ঘুরতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। ২০২০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষায় ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় সরকার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে।

কিশোরগঞ্জ হাওরের সবুজ পানির সৌন্দর্য

এছাড়া, উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের ভাঙনরোধে রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সারাদেশের মানুষ বর্ষা মৌসুমে ছুটে আসে নিকলী ও মিঠামইন হাওরে। তাই নিকলীকে হাওর পর্যটনকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রখর রৌদ্রের উপেক্ষা করে বেড়িবাঁধের রাস্তায় ও নৌকায় ঘুরাঘুরি করছে পর্যটকরা। তাদের এমন উপস্থিতিতে যেনো নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে মিঠামইন হাওর। শুধু এবারই নয়, প্রতি বছর ঈদের ছুটি ও বর্ষাতে নিকলী বেড়িবাঁধে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। এতে স্থানীয় নৌকার মাঝি ও হোটেল-রেস্তুারার মালিকদের ব্যবসাও ভালো হয়।

বর্ষাকালে ট্রলারের মাধ্যমে পর্যটকদের হাওরে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সুমন মিয়া। ২৪ ঘন্টা বাংলাদেশ’কে তিনি বলেন, ‘সারা বছরই আমরা এই বর্ষার অপেক্ষায় থাকি। এ সময় হাওরে পর্যটকদের আগমন ঘটে। তাদেরকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে হাওরের কয়েক হাজার মাঝি ও মালিকের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাওরের পানি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের ছুটি থাকায় হাওরে পর্যটকও আসছেন। আশা করছি পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।’

বিশাল জলরাশি ও হাওরের দিগন্ত ছোঁয়া অপরুপ দৃশ্য

নরসিংদী থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসা হাসানুল শুভ ২৪ ঘন্টা বাংলাদেশ’কে বলেন, ‘আজকে ১০টি বাইকে ২০জন বন্ধু বালিখলা, মিঠামইন হাওরে ঘুরতে এসেছি। হাওরে মাত্র নতুন পানি এসেছে। কিছু সময় ট্রলারে করে হাওর ঘুরে দেখলাম, অনেক আনন্দ পেয়েছি। পরিবেশটাও বেশ ভালো লেগেছে।’

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটকদের আগমনে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষ দেখছি, তাদের সাথে কথা বলে একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। পর্যটকরা যেনো হাওরের সৌন্দর্য নির্দ্বিধায় এবং স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করতে পারেন সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসনকেও সচেতন থাকতে হবে।

মিঠামইন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ঈদের পর থেকে মিঠামইন হাওরে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। মিঠামইন জিরো পয়েন্টে আসার আগে দুটি স্থানে চেকপোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জিরো পয়েন্ট এলাকায় সিভিল এবং পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এছাড়া, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভ্রমণের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব ধরনের সুবিধা পুলিশের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

scroll to top