কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ইসলামের একটি মহান ইবাদত, যার মূল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত ও হৃদয়ের তাকওয়া। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মরণে মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর এই ইবাদত পালন করে, যার পেছনে রয়েছে আত্মত্যাগ, খোদাভীতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের গভীর শিক্ষা।
কোরবানির উদ্দেশ্য ও নিয়ত
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। ইসলামি দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, কোরবানির সময় একটি মুসলমানের নিয়ত হওয়া উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু উৎসর্গ করা। কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ্ব: ৩৭)। এর মানে হলো, কোরবানির বাহ্যিক কাজের চেয়ে অভ্যন্তরীণ নিয়ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, কোরবানির সময় আমাদের নিয়ত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
মানসিক প্রস্তুতি
কোরবানি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি একটি আত্মিক ইবাদত। এই ইবাদতের জন্য মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরবানির মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি এবং আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্য প্রকাশ করি।
বিশুদ্ধ নিয়তের পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ। কোরবানির মাধ্যমে একজন মুসলমানকে আত্মিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয় আল্লাহর পথে সবকিছু উৎসর্গ করতে। এটা শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের প্রতীক। অনেকে শুধু সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে কোরবানি করেন, যা মূলত ইসলামের মূল ভাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কোরবানির সময় দোয়া
কোরবানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া পাঠ করতেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে: “اللهم منك ولك” অর্থাৎ, “হে আল্লাহ, এটি তোমারই পক্ষ থেকে এবং তোমারই জন্য।” এছাড়া পশু জবাইয়ের সময় “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নত।
কোরবানির পশু নির্বাচন
কোরবানির জন্য পশু নির্বাচনের সময় শরিয়তের নির্দেশনা অনুসরণ করা আবশ্যক। শরিয়তে নির্ধারিত পশুগুলোর মধ্যে রয়েছে উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এই পশুগুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আন‘আম’। পশু যেন অন্ধ, পঙ্গু বা দুর্বল না হয়, সে বিষয়ে কোরআন-হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে।
সবশেষ
কোরবানি একটি মহান ইবাদত, যা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। এই ইবাদতের মূল ভিত্তি হলো বিশুদ্ধ নিয়ত ও মানসিক প্রস্তুতি। আসুন, আমরা এই কোরবানির মৌসুমে আমাদের নিয়ত বিশুদ্ধ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা হলো আত্মত্যাগ, খোদাভীতি এবং সাম্য। আসুন, আমরা এই ইবাদতের মূল শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করি এবং বিশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হই।