এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৬৫ জনে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহমেদাবাদে ঘটনাস্থলে ২৯০টি মরদেহ বহনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI-171 নম্বরের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি বৃহস্পতিবার দুপুরে উড্ডয়নের ৩৪ সেকেন্ডের মাথায় ভেঙে পড়ে। বিমানটির সামনের অংশ গিয়ে পড়ে বিজে মেডিকেল কলেজের ‘অতুল্যম-১১’ আবাসনে, যেখানে ইন্টার্ন ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকরা থাকতেন। বিমানটির মাঝের অংশ ছিটকে পড়ে কলেজসংলগ্ন বাগান ও সড়কে, আর লেজ ও চাকাগুলো গিয়ে আটকে যায় চিকিৎসকদের মেসের ছাদে। দুঘটনাটির সময় নিজেদের মেসের ক্যান্টিনে মধ্যাহ্নভোজে ব্যস্ত ছিলেন চিকিৎসকরা।
বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রুর বাইরে, নিচে থাকা আরও অন্তত ২৩ জন মারা গেছেন—যাদের মধ্যে চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। নিহতদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন—ডা. আরিয়ান রাজপুত, ডা. মানব ভাদু, ডা. রাকেশ দেওরা এবং ডা. প্রদীপ সোলঙ্কির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কাজল সোলঙ্কি। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আবাসিক চিকিৎসক জয় প্রকাশ চৌধুরী।
একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক কুশল চৌহান জানান, “যদি বিমানটি ১০ মিনিট পরে বিধ্বস্ত হতো, তাহলে মেসে থাকা ৩০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক প্রাণ হারাতে পারতেন।”
চিকিৎসক রামকৃষ্ণ বলেন, “এক বন্ধু আমাকে সতর্ক করেছিল যে, খুব নিচ দিয়ে একটি বিমান উড়ছে। আমি বাইরে যেতেই বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। চারপাশে আগুন, ধোঁয়া, চিৎকার—সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় দৃশ্য। আমরা নিজেরাই ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচটি মরদেহ টেনে বের করি।”
মেসের ভেতর আটকে থাকা ডা. মোহিত চাভদা বলেন, “লাগেজ আর বিমানের ধ্বংসাবশেষ বৃষ্টির মতো পড়ছিল। আমি ১০ মিনিট নিঃশব্দে বসে ছিলাম, কী করব বুঝতেই পারিনি।”
বিমানে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয় যাত্রী। উড্ডয়নের পর বিমানটি মাত্র ৪২৫ ফুট উচ্চতায় উঠতেই নিয়ন্ত্রণ হারায়।
পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল একটি মায়ডে কল (জরুরি সংকেত) পাঠান, যা ছিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ। এটি ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ইতিহাসে প্রথম বড় দুর্ঘটনা—যা গত এক বছরে ৪১ হাজার ঘণ্টা উড়েছে এবং ৮ হাজার ল্যান্ডিং করেছে। দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ইঞ্জিন ফেইলিওর বা পাখির ধাক্কা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে, তবে তদন্ত চলছে।
জাতীয় দুর্যোগ সাড়া দল (NDRF) ইতোমধ্যে ছয়টি দল মোতায়েন করেছে। তাদের একজন কর্মকর্তা হরিওম গান্ধী বলেন, “পুরো জায়গা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা চূড়ান্ত মৃতের সংখ্যা জানাতে পারছি না।”
এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা প্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপ নিহতদের পরিবারপ্রতি ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত মেডিকেল কলেজ ও আবাসিক এলাকা পুনর্নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মরদেহ শনাক্তের কাজ চলছে আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে। পুলিশ নিহতদের পরিবারের পাশে থেকে সহায়তা দিচ্ছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মেডিকেল ওয়ার্ল্ড থেকে শুরু করে গোটা শহরে শোকের ছায়া ফেলেছে। একটি সাধারণ দুপুর মুহূর্তেই রূপ নেয় এক বিভীষিকাময় স্মৃতিতে।