সচিবালয়ে সঙ্কট নিরসনে ৮ সদস্যের সচিব কমিটি

New-Project-2-2.png
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত হয়েছে একটি ৮ সদস্যের সচিব কমিটি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটি শিগগিরই বিক্ষোভরতদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো চেয়ারম্যান বাদিউল কবির। তিনি বলেন, “সচিব কমিটি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বলে জানিয়েছেন। তবে এখনো বৈঠকের নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।”

সকাল থেকেই সচিবালয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মূল ফটকে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমনকি সংবাদকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা বিভিন্ন স্লোগানে সচিবালয় এলাকা মুখর করে তোলে। ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অবৈধ কালো আইন বাতিল কর’, ‘কর্মচারী মানে না কালাকানুন’, ‘এক হও লড়াই কর, ১৮ লাখ কর্মচারী’—এমন নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সচিবালয়ের আশপাশ।

কেন এই আন্দোলন?

বিক্ষোভরত কর্মচারীদের দাবি, সম্প্রতি প্রণীত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ একটি কালাকানুন। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের একটি বাতিলকৃত আইনকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে বাতিল করেছে।

ঐক্য ফোরামের নেতারা বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার খর্ব হবে। তারা আরও বলেন, “এই অধ্যাদেশে এমন কিছু বিধান রয়েছে যার ফলে চাকরিতে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে বরখাস্ত বা শাস্তি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এটা এক ধরনের সরকারি সন্ত্রাসের বৈধতা দেওয়ার শামিল।”

সচিবালয় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক কর্মচারী বলেন, “আমরা এই কালাকানুন মানি না, মানবো না। প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেব।” অন্য এক কর্মচারী বলেন, “এই আন্দোলন আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আমরা কোনো অবস্থাতেই পিছু হটব না।”

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচিব কমিটি গঠন করেছে। সূত্র জানায়, এই কমিটিতে অর্থ, জনপ্রশাসন, আইন, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, মন্ত্রিপরিষদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরা রয়েছেন। তাদের দায়িত্ব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা খুঁজে বের করা।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা নির্দিষ্ট ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের ভাষ্য, “আমরা প্রতিশ্রুতিতে নয়, কার্যকর সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী।”

বিক্ষোভের কারণে সচিবালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়গুলোর অনেক ফাইলে সই হচ্ছে না, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।

প্রবীণ প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে শুধু প্রশাসন নয়, উন্নয়ন প্রকল্প ও সাধারণ জনগণও এর বিরূপ প্রভাবের শিকার হবে।”

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই আন্দোলনের কী পরিণতি হবে? সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ইঙ্গিত দিলেও মাঠের পরিস্থিতি বলছে, তা সহজে হবে না। কারণ আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যেই আপস নয়, সংগ্রামের পথে অটল থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

 

Leave a Reply

scroll to top