‘সান্ডা সাথে পান্ডা ফ্রি’—এই ব্যতিক্রমী অফার এখন পুরো ধামরাই জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আরবের কফিলদের পছন্দের ছোট আকারের ষাঁড়ের আদলে তৈরি হলেও, এই ‘সান্ডা’ গরুটি বিশালাকৃতির। আর তার সঙ্গী ‘পান্ডা’—একটি ছাগল, যার গায়ের রঙ হুবহু পান্ডার মতো। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ধামরাইয়ে গড়ে উঠেছে এই অনন্য জুটি।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের নায়ক সাভার কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হোসাইন। নিজেই পালের বাছুরকে লালন-পালন করে গড়ে তুলেছেন বিশাল এই গরুটি। তিন বছর ধরে পারিবারিক খামারে যত্ন করে বড় করেছেন ‘সান্ডা’কে। তিনি জানান, “ভাইরালের যুগে নামটাও রেখেছি একটু আলাদা করে—‘সান্ডা’। আর গরুটি বিক্রি হলে ফ্রি দেওয়া হবে একটি ছাগল, যার নাম ‘পান্ডা’। এখন এই জুটি নিয়েই আমাদের গ্রামে সবার আগ্রহ চরমে।” তাই এলাকাজুড়ে হইচই পড়ে গেছে: “সান্ডা সাথে পান্ডা ফ্রি!” শ্লোগানটিই যেন রীতিমতো উৎসবের আমেজ তৈরি করেছে।
সান্ডার শারীরিক গঠন ও পরিচর্যা
অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র নাঈম হোসাইন নিজেই এই গরুটির পালন করেছেন। ধামরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা নাঈম জানান, তিন বছর আগে তাদের খামারের একটি গাভির বাছুর ছিল ‘সান্ডা’। গরুটি ফ্রিজিয়ান জাতের। আদর, যত্ন আর নিয়মিত পরিচর্যায় বাছুরটি এখন রীতিমতো দানবীয় আকার ধারণ করেছে। তার উচ্চতা ৬.৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৩১ মণ। বিক্রির জন্য তিনি দাম চেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা।
এই গরুটি শুধু বিশাল আকারেই নয়, পরিচর্যাতেও ব্যতিক্রম। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয় তাকে। গরম থেকে রক্ষা করতে সারাক্ষণ মাথার ওপর ফ্যান চালানো হয়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে গোয়ালঘরে নিয়মিত স্প্রে দেওয়া হয়। খাদ্য তালিকায় রয়েছে খৈল, ভেজানো ছোলা, ভুট্টা, গমের ভুসি, মিষ্টি কুমড়া ও তাজা ঘাস। প্রতিদিন খাবার খরচই পড়ে প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা।
পান্ডা—ব্যতিক্রমী এক সঙ্গী
সান্ডা-পান্ডা জুটির চমক এই গরু ক্রয়ের সঙ্গে ফ্রি যে ছাগলটি দেওয়া হবে, তার গায়ের রঙ ও অবয়ব পান্ডার মতো। এই ছাগলটি নিয়েও ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। শিশুরা এসে তাকে আদর করছে, ছবি তুলছে। ফলে সান্ডার সঙ্গে পান্ডার উপস্থিতি পুরো বিষয়টিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
দর্শনার্থীদের ভিড়
সান্ডাকে কখনও গোয়ালঘর থেকে বের করা হয়নি, কারণ তার বিশাল দেহ সামাল দেওয়া কঠিন। এখন প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ আসছেন তাকে দেখতে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। অনেকেই দরদাম করছেন, তবে মালিকের শর্ত একটাই—যতক্ষণ না সন্তোষজনক দাম পাওয়া যাচ্ছে, বিক্রি নয়।
ছাত্র হয়েও পারিবারিক খামারের দেখভাল করেন নাঈম। তিনি জানান, গত বছরও গরুটি বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন, তবে মনমতো দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি। এবার আশাবাদী ভালো দামে বিক্রি হবে। তিনি আরও বলেন, “সান্ডা শুধু একটা গরু না, আমার পরিশ্রমের ফসল। আর পান্ডা দিয়ে মানুষকে একটুখানি আনন্দ দিতে চেয়েছি।”
সান্ডা ও ফ্রিজিয়ান জাত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় সাধারণত দুধ উৎপাদনের জন্য খ্যাত হলেও সঠিক পুষ্টি ও পরিচর্যায় এদের বিশাল আকার ধারণ সম্ভব। সান্ডা তার জীবন্ত উদাহরণ। শুধু ধামরাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ইতোমধ্যেই সান্ডা ও পান্ডা নামের এই জুটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—কোন সৌভাগ্যবান ক্রেতা শেষমেশ সান্ডাকে নিয়ে যাবেন, আর তার সঙ্গে উপহার হিসেবে পাবেন পান্ডা নামের সেই মন মাতানো ছাগলটিকে।