হাসি—একটি সরল শব্দ, কিন্তু এর প্রভাব গভীর। মুখে একটি মৃদু হাসি যেন অদৃশ্য ভাষা, যা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে মুহূর্তেই সংযোগ তৈরি করতে পারে। আজ বিশ্ব হাসি দিবস, এমন একটি দিন যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—হাসি শুধু মুখের নয়, এটি হৃদয়ের একটি প্রতিফলন। বিশ্ব হাসি দিবস—একটি এমন দিন, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ অথচ সবচেয়ে শক্তিশালী কাজ হতে পারে একটি সত্যিকারের হাসি।
একটি শিশুর নিষ্পাপ হাসি আমাদের ক্লান্ত দেহ ও জর্জর মনকে আরাম দেয়। ঠিক যেমন করে একটি বয়স্ক মুখে দেখা যায় হাজারো সংগ্রামের মাঝেও শান্তির ছায়া। হাসি সব বয়সের, সব শ্রেণির মানুষের মাঝে সমানভাবে আলো ছড়ায়। এই দিনে আমরা স্মরণ করি—হাসি কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এক ধরনের ওষুধ, আত্মার ওষুধ।
বিশ্ব হাসি দিবসের মূল বার্তা হল—“শান্তি অর্জনের জন্য হাসির মাধ্যমে বিশ্বকে এক করতে হবে।” এই ভাবনা থেকেই ১৯৯৮ সালে ভারতে জন্ম নেওয়া ‘লাফটার যোগা’র প্রতিষ্ঠাতা ড. মদন কাটারিয়া এই দিনটির সূচনা করেন। উদ্দেশ্য ছিল একটি দিন নির্ধারণ, যেখানে মানুষ অন্তত একবার হলেও নির্ভেজালভাবে হাসবে, একজন অপরিচিতকে হাসাবে, ভালোবাসবে—একটি ভালোবাসার শেকড়ের মতো। তাঁর ভাবনা ছিল—”হাসি দিয়ে যদি আমরা শরীর-মন সুস্থ রাখতে পারি, তাহলে কেন না সেটাকে একটা বিশ্বজনীন আন্দোলনে রূপ দেওয়া যায়?”
এই দিনে কেউ হয়তো অসুস্থ মায়ের পাশে বসে একটি ছোট্ট কৌতুক শোনায়, কেউ শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে তার প্রিয় খেলনা ফিরিয়ে দেয়, আবার কেউ ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে হঠাৎ কারও দিকে তাকিয়ে মৃদু করে বলে—”আপনি সুন্দর হাসেন।”
মানবজীবনে যত জটিলতা, কষ্ট আর প্রতিদিনের সংগ্রামই থাকুক না কেন, একটি আন্তরিক হাসি যেন আলোর মতো ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে অন্ধকার মন থেকে। হয়তো সে হাসিতে লুকিয়ে থাকে না বলা অনেক কিছু—ভালোবাসা, ক্ষমা, আশ্বাস, এমনকি বেঁচে থাকার সাহস।
হাসি, যা বদলে দেয় মানুষকে
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, একটি সত্যিকারের হাসি মানুষের মনের দেয়াল ভেঙে সম্পর্ক গড়ে তোলে। হাসপাতালের রোগীর মুখে ছোট্ট হাসি অনেক সময় চিকিৎসার চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে। একজন ক্লান্ত গার্মেন্টস কর্মীর দুপুরবেলার হালকা হাসিই তার সারা দিনের পরিশ্রমে শক্তি যোগাতে পারে। স্কুলের শিশু, যাকে হয়তো বাবা-মার শাসনে একটু বিষণ্ন মনে হচ্ছিল, সহপাঠীর একটি ছোট্ট কৌতুকেই ঝলমলে হয়ে ওঠে তার মুখ।
একটি হাসির পেছনে অনেক গল্প
আজকের দিনে আমরা ভাবতে পারি সেইসব মানুষের কথা, যারা কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও হাসতে শিখেছে। যেমন, হাসপাতালের নার্স যারা দিনের পর দিন দুঃখী রোগীর মুখে হাসি ফোটাতে নিজেই হয়তো নিজের কষ্ট চেপে রাখেন। অথবা, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শিশুটির কথা, যে একটি খেলনা পেয়ে ঝলমলিয়ে হেসে উঠে—যেন পৃথিবীতে কিছুই হারায়নি সে।
এই দিবসে কী করতে পারি আমরা?
🔹 আজ কাউকে অবহেলায় নয়, ভালবাসার হাসিতে সম্ভাষণ দিন।
🔹 পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে বসে তাদের ছোটবেলার গল্প শুনুন—দেখবেন, হাসি আসবেই।
🔹 কর্মক্ষেত্রে কারও মুখ গম্ভীর দেখলে বলুন, “তোমার হাসিটা মিস করছি।”
🔹 আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলুন—“আজ তোকে খুশি রাখা আমার দায়িত্ব।”
শেষ কথায়…
এই জটিল, ক্লান্ত, প্রথাবদ্ধ জীবনে আমরা অনেক কিছু ভুলে যাই। কিন্তু একটুকরো হাসি—সে ভুলিয়ে দিতে পারে অভিমান, কষ্ট, এমনকি হারানোর যন্ত্রনাও।
আজ বিশ্ব হাসি দিবসে আসুন, আমরা কেউ একজনের মুখে হাসি ফোটাই। হয়তো সেই হাসির প্রতিধ্বনি ফিরে আসবে আমাদের কাছেই—আর বলে উঠবে: “তোমার একটুখানি হাসি, আমার গোটা দিনটাকে সুন্দর করে দিল।”