বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, যার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে অসাবধানতা, অরক্ষিত রেলক্রসিং এবং সচেতনতার অভাব চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (PWAB) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৪৯৭টি রেল দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছেন ।
ময়মনসিংহে ৪৯ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহে ২০২৪ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই অঞ্চলে ২০০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১০৫টি অরক্ষিত, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিং এবং সচেতনতার অভাবকে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে。
ভৈরবে ৮৫ জনের প্রাণহানি
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে থানাধীন রেলপথে ২০২৪ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫৮ জন, নারী ২৫ জন এবং একজন করে শিশু-কিশোর। এদের অধিকাংশই অজ্ঞাতপরিচয়। যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ এসব মৃত্যুর কারণ।
আখাউড়ায় ৪৮ জনের মৃত্যু
আখাউড়ায় গত ১৫ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ট্রেনের ছাদে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
দুর্ঘটনার কারণ
রেল দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- অরক্ষিত রেলক্রসিং: অনেক রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান বা সিগন্যালের অভাব।
- সচেতনতার অভাব: রেললাইন পারাপারে অসতর্কতা, কানে ইয়ারফোন ব্যবহার।
- ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ: বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে টিকটক ভিডিও তৈরির প্রবণতা।
সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই দুর্ঘটনাগুলো প্রতিরোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ এবং ব্যারিয়ার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জনসচেতনতা ছাড়া এই উদ্যোগগুলো কার্যকর হবে না। সাধারণ জনগণকে রেললাইনে চলাচলের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং রেলওয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন:
অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ: দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ।
সচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা।
আইন প্রয়োগ: রেললাইনে অননুমোদিত প্রবেশ ও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, যাতে রেলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং মূল্যবান জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়। তবে, এসব উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করে জনসচেতনতার ওপর। সাধারণ জনগণকে রেললাইনে চলাচলের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং রেলওয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।