সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সেলিম রেজার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ও নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ উঠছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার পরিবর্তনের পরও তার দাপট কমেনি—বরং বিএনপির কিছু নেতার প্রশ্রয়ে এখনো এলাকায় তিনি ‘অঘোষিত শাসক’ হিসেবেই রয়ে গেছেন।
শনিবার (১৭ মে) বিকেলে পাইকশা গ্রামে সরেজমিনে গেলে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, সেলিম রেজা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মারধর, ছিনতাই এবং মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ দখলের মতো গুরুতর অভিযোগও।
হামলা, ছিনতাই ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দা সাথী খাতুন অভিযোগ করেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার স্বামী আব্দুল্লাহ শেখকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করে সেলিম ও তার সহযোগীরা। তারা রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও বেধড়ক মারধর করে। ঘটনার সময় তার স্বামীর সঙ্গে থাকা নগদ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনার পর সেলিম রেজাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে আরও ৩–৪ জন অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছে।
দীর্ঘ দিনের অভিযোগের ফিরিস্তি
৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মমিন বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সেলিমের অত্যাচারে এলাকাবাসী শান্তিতে থাকতে পারেনি। এখন আওয়ামী লীগ সরকার নেই, তবুও বিএনপির কিছু নেতার ছত্রছায়ায় সে এলাকায় অপকর্ম করে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “সেলিম একজন বড় অর্থদাতা। তার বিপুল টাকার জোরেই এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আগে তার কিছুই ছিল না, এখন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। চোরাই পথে সুতার ব্যবসা করে সে এখন শতকোটি টাকার মালিক।”
মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ
পাইকশা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বজলুর রহমান অভিযোগ করেন, কমিটির সভাপতি পদ না পেয়ে সেলিম এক সময় তাকে মারধর করেন। থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি। সে সময় শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে সেলিমের শাস্তি দাবি করেছিলেন।
অভিযুক্ত সেলিম রেজার বক্তব্য
অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিম রেজা বলেন, “আব্দুল্লাহ শেখের উপর হামলার ঘটনায় আমি জড়িত না। তবুও আমাকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও প্রভাব বিস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “দল আমাকে পদ দিলে দিতেই পারে। তবে আমি সেটা নিয়ে কখনও বাহাদুরি দেখাইনি।”
পুলিশের বক্তব্য
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার জানান, “আব্দুল্লাহ শেখের ওপর হামলার মামলায় একজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, “মামলার পরপরই আমরা একজনকে গ্রেফতার করেছি। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”