চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের ঘোষিত সময়ের মধ্যে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত না করার প্রতিবাদে আমরণ অনশনে বসেছেন ইনস্টিটিউটির নয় শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ১৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অনশন ভাঙেনি তারা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করছেন তারা। সিন্ডিকেট থেকে এ বিষয়ে রায় না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, এ বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনা হবে এবং ১ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবে।
অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার হাসান সোহেল, ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাসরুল আল ফাহিম, ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়ামিন, একই শিক্ষাবর্ষের মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা, ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি, ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম মাহী এবং একই শিক্ষাবর্ষের মাহমুদুল হাসান মিনহাজ।
অনশনরত চারুকলা ইনস্টিটিউটের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসরুল আল ফাহিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটা ভঙ্গ করেছে। ১ এপ্রিল থেকে আমাদের মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের বলেছেন, চারুকলার পরিচালক-শিক্ষকরা সহযোগিতা না করায় এ বিষয়ে নাকি তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।”
তিনি বলেন, “চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে আনার আন্দোলন দীর্ঘদিনের। তিলেতিলে আমরা আর মরতে চাই না। হয় সিন্ডিকেট সভা থেকে রায় আসবে, নয় অনশনের মাধ্যম আমাদের মৃত্যু হবে।”
চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সজিব বলেন, আমরা গতকাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশন করছি। এরমধ্যে প্রোভিসি. এবং প্রক্টর স্যার এসেছিলেন। আমাদের দাবি, যতদ্রুত সম্ভব চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়ায় আমরা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় দিতে পারি।
তিনি বলেন, “ চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। তবে চারুকলার পরিচালক-শিক্ষকদের অসহযোগিতায় এটি বিলম্ব হচ্ছে। আমরা চাই, দ্রুত চারুকলা তার জায়গায় ফিরুক। সিন্ডিকেট থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং জনসম্মুখে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।”
চারুকলার শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, “চারুকলা ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আমরা মূল ক্যাম্পাসে থাকতে চাই। এজন্য আমরণ অনশনে বসেছি। সিন্ডিকেট থেকে রায় না আসা পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা পহেলা এপ্রিল থেকে চারুকলার ক্লাস মূল ক্যাম্পাসে করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু অফিসিয়াল কিছু কাজের জন্য একটু দেরি হচ্ছে। তবে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি পাশ হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা চারুকলাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে পারব।”
এদিকে আজ সকাল ১০ টায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন অনশনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানালে তারা যেতে রাজি হননি। তারা জানিয়েছেন, তারা আর আলোচনায় যেতে চান না, তারা চান সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধান্ত।