মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের সিদ্ধান্ত ঢাবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের

New-Project-82.jpg

মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের সিদ্ধান্ত ঢাবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় শহীদ আবু সাঈদ এর ২০ ফুট লম্বা একটি প্রতিকৃতি তৈরি সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবির চারুকলা অনুষদ। অন্যান্য বছরগুলোতে কোন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা করলেও, এই প্রথম কোন মানুষের প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রার বিষয়টি নিয়ে জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ। কারণ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ভাব আবেগের সাথে এই বিষয়টি পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। শহীদ আবু সাঈদের ফেসবুক পোষ্ট থেকেও জানা যায় যে তিনি নিজেই ছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিকৃতির বিরুদ্ধে। এছাড়া শহীদ আবু সাঈদের পিতা গণমাধ্যমকে জানান ইসলামী শরিয়ায় এটা নিষিদ্ধ সে কারণে তিনি চান না তার সন্তানের কোন প্রতিকৃতি তৈরি করা হোক।

গত বছর ১৪ এপ্রিল এক ফেসবুক পোস্টে আবু সাঈদ লেখেন, “যখন ভারত চাঁদে নভোযান পাঠায়, আমেরিকা মঙ্গল গ্রহে পাঠায় মানুষ ঠিক তখনই কোন এক বেকুবের দল নাকি একবার লক্ষ কন্ঠে জাতীয় সংগীত গায়, একবার লম্বা পতাকা বানায়, এবার নাকি রাস্তায় আল্পনা এঁকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে! হেরা নাকি আবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে হুতুম পেঁচাও নাচায়! আর নিজেকে দাবি করি প্রগতিশীল।”

এদিকে আবু সাঈদের ভাস্কর্যে নিজেদের কোন দায় নেই বলে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুষদের ২৬ তম ব্যাচ বিবৃতিতে জানায়, ” .. শুরুতেই সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, এবারের বৈশাখের আয়োজনের সাথে আমাদের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর আমাদের ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্র প্রতিনিধি কারো সাথে কোনরকম পূর্ব আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।”

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “শোভাযাত্রায় বানানো স্ট্রাকচার এর ডিজাইন এবং আইডিয়া সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সাথে কোনও ভাবেই সংযুক্ত এবং অবগত না। শহীদ আবু সাঈদের স্ট্রাকচার সম্পর্কে ও আমরা অবগত ছিলাম না এবং কারো ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও না আমরা। এহেন কুরুচিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে নেওয়া হয়নি এবং চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের সাথে ছিলনা অতএব এর জন্য অনলাইনে তৈরি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দায় সমগ্র চারুকলার নয় বরং দায়িত্বে থাকা নির্দিষ্ট কতিপয় আয়োজক এবং ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ওপর বর্তায়।”

 

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক শিক্ষকদের অভিযুক্ত করে বলা হয়, “এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা এটুকু স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, আমরা মোটাদাগে প্রতিবছর চারুকলা অনুষদে আয়োজিত হয়ে আসা বৈশাখের আয়োজন নয় বরং স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী এবারের ‘বৈশাখ ১৪৩২’ এর আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে আমরা, চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

প্রসঙ্গত, মঙ্গল শোভাযাত্রায় শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতির বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নেটিজেনরা।

Leave a Reply

scroll to top