ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ-কে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ মোট ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাটির অভিযোগে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন এম এ হাশেম রাজু নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান সহ সাবেক সাত উপাচার্য:
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবা কামাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া, মুনতাসির মামুন, অধ্যাপক ড.মিহির লাল সাহা, অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অনুপম সেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য আব্দুল মান্নান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নগরবিদ নজরুল ইসলাম, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার, সংগঠক লাকী আক্তার, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, নায়েক রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অভিনেতা সাজু খাদেম, অভিনেত্রী আসনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, অভিনেতা মামুনুর রশিদ, নায়েক জায়েদ খান ও রোকেয়া প্রাচী।
এ ছাড়াও আছেন- সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মসিউর রহমান, ড.গওহর রিজভী, ড.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত, সুভাষ সিংহ রায়সহ প্রমুখ।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি যখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছায়, তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলকারীদের পথরোধ করে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গুলি, হাতবোমা, পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়। এরপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে। এতে সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ গুরুতর আহত হন এবং তার ডান চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হওয়ার পর তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের সদস্যরা তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।
এই মামলার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা দেশের শিক্ষা, রাজনীতি ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। ফলে মামলাটি রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। অন্যদিকে, সরকারি দল ও তাদের সমর্থকরা বলছেন, এই মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শাহবাগ থানার ওসি মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।