বিসিবি থেকে কড়া বার্তাই গেছে বিপিএলের দল দুর্বার রাজশাহীর কাছে। গতকাল পর্যন্ত খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের একটি টাকাও না দেওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে বিসিবির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আজকের মধ্যে প্রতিশ্রুত টাকা না দিলে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করা হবে। নতুন মালিক পাওয়া না গেলে দুর্বার রাজশাহীর দায়িত্ব নিতে পারে বিসিবি।
বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে খেলোয়াড়দের চুক্তি অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পাওনা টাকার ৫০ শতাংশ দিয়ে দেওয়ার কথা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। টুর্নামেন্ট চলাকালীন দিতে হবে আরও ২৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে টুর্নামেন্ট শেষে।
তবে অন্যান্যবারের মতো এবারও বিপিএল শুরু হওয়ার আগে চুক্তি মানেই কোনো দলই । এখনো অনেক দলের ক্রিকেটাররা প্রতিশ্রুত পুরো টাকা পাননি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুর্বার রাজশাহীর খেলোয়াররা এখনো কোন টাকা ই পায়নি।
টাকা না পাওয়ার বিষয়টি এতো দিন গুঞ্জণ হিসেবে থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসে পারিশ্রমিক না পেয়ে গতকাল রাজশাহীর অনুশীলন বয়কট করলে। তবে বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের আশ্বাসে আজ সকালে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে তাঁরা অনুশীলন করেন। অনুশীলন শেষে দলের ম্যানেজার মেহরাব হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, খেলোয়াড়েরা মানসিকভাবে ঠিকঠাক আছেন। আজকের মধ্যে তাঁরা প্রতিশ্রুত টাকা পেয়ে যাবেন। যদি না পান তাহলে ম্যাচ বয়কট করার মতো পরিস্থিতি ঘটতে পারে।
তবে জানা গেছে, এর আগে বিসিবির কড়া ধমকই খেয়েছে দুর্বার রাজশাহী কর্তৃপক্ষ। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কাল বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ কথা বলেছেন দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় ও ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এনামুলের মাধ্যমে দলের ক্রিকেটারদের সমস্যা সমাধানে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি ফারুক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন কড়া আলটিমেটাম।
খেলোয়াড়দের সময়মতো টাকা দিতে না পারায় বোর্ড সভাপতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ। বিসিবি সভাপতি তাদের বলেন, আজকের মধ্যে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ টাকা নগদ দিতে হবে। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ টাকার চেক দিতে হবে, যা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য। এর অন্যথা হলে দুর্বার রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন সভাপতি।
সেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বিসিবির চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে বিসিবির আইনি উপদেষ্টাদের মতামত নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওদিকে কাল বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে দুর্বার রাজশাহীর পক্ষে অপারেশন ইনচার্জ জায়েদ আহমেদ ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজকের মধ্যেই তারা খেলোয়াড়দের ২৫ শতাংশ টাকা নগদ এবং ২৫ শতাংশ টাকার চেক দিয়ে দেবেন।
এর আগে খেলোয়াড়দের দেওয়া চেক বাউন্সের অভিযোগও উঠেছিল দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে। এ ব্যাপারে জায়েদ আহমেদের ব্যাখ্যা, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের স্ত্রী চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে থাকায় খেলোয়াড়দের বলা হয়েছিল চেক যেন তখন ব্যাংকে জমা না দেওয়া হয়। তিনি আসার পর যেন চেক জমা দেওয়া হয়, নয়তো চেকে যার সই, সেই মালিকের স্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও দু–একজন খেলোয়াড় ‘ভুলবশত’ চেক জমা দিতে গিয়েছিলেন।
পারিশ্রমিকের টাকা দিতে না পারলেও প্রথম ম্যাচ জেতার পর সিলেটে দলকে উইনিং বোনাস দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করতে স্থানীয় ১৪ খেলোয়াড়কে এক লাখ টাকা করে ‘উপহার’ দেওয়া হয়েছে।
সময়মতো টাকা দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও জায়েদ দাবি করেছেন, টাকা না পাওয়ায় কাল খেলোয়াড়েরা অনুশীলণ করেননি, খবরটি সঠিক নয়। কাল পর্যন্ত সব ক্রিকেটার টিম হোটেলে না ওঠাতে নাকি ম্যানেজেমেন্টই খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছিল।
তবে গতকাল খেলোয়াররা জানিয়েছে তারা পারিশ্রমিকের জন্য ই অনুশীলন বয়কট করেছিল।