ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রমজান মাসের পবিত্র আবহ সবাইকে আধ্যাত্মিক প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আশেপাশের বাসিন্দারা এই মাসের বরকত ও ইবাদতের সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে এখন রমজানের আমেজ স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিরাজ করে এক অনন্য ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশ।
সাহরি ও ইফতারের সময় ক্যাম্পাসে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। মসজিদগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ, ফজলুল হক মুসলিম হল মসজিদ ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে তারাবির নামাজে অংশ নিতে প্রতিদিনই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি। নামাজ শেষে কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় আলোচনায় মগ্ন থাকেন অনেকেই। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, “রমজান মাসে ঢাবির ক্যাম্পাসে এক বিশেষ ধরনের আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা এই সময়ে ধর্মীয় চর্চার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও সম্প্রীতির শিক্ষা লাভ করেন।”
ইফতারের সময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সামর্থ্যবান শিক্ষার্থীরা ইফতার বিতরণের আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় গেট, লাইব্রেরি চত্বর, টিএসসি এবং বিভিন্ন হলের সামনে ইফতারির স্টল বসে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা রমজানের পবিত্রতা ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।
ঢাবির শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, “রমজানে ইফতারের সময় সবাই একসাথে বসে ইফতার করি। এটা আমাদের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়।”
রমজানের এই পবিত্র মাসে ঢাবির শিক্ষার্থীরা শুধু ইবাদত-বন্দেগিতেই মনোনিবেশ করেন না, বরং সমাজসেবামূলক কাজেও অংশ নেন। অনেক শিক্ষার্থী রমজানে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রক্তদান, খাবার বিতরণ ও অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করেন। এতে করে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে।
ঢাবির স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিফাত আহমেদ বলেন, “রমজান মাসে আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এই মাসে আমাদের দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা আরও বৃদ্ধি পায়।”
ঢাবির ক্যাম্পাসে রমজানের এই আমেজ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিই জাগ্রত করে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্যেরও প্রতীক হয়ে ওঠে। এই মাসে সবাই যেন একই সুতোয় গাঁথা, যা ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক নতুন প্রেরণা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। রমজানের এই পবিত্র সময়ে ঢাবির পরিবেশ হয়ে ওঠে আরও বেশি আধ্যাত্মিক ও মানবিক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, “ঢাবির ক্যাম্পাসে রমজানের আমেজ সত্যিই অনন্য। এখানে ধর্মীয় চর্চার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।”
রমজান মাসে ঢাবির ক্যাম্পাসে ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের এই সমন্বয় সত্যিই প্রশংসনীয়। এই মাসের পবিত্রতা ও শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, যা তাদেরকে আরও বেশি মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।