ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা না হলেও ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে কয়েকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এসব ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, এ অঞ্চলে ভূগর্ভে দুটি প্লেট ধাবিত হচ্ছে। ইন্ডিয়া প্লেট পূর্বদিকে যাচ্ছে। বার্মা প্লেট পশ্চিমের দিকে আসছে। বার্মা প্লেটের নিচে ইন্ডিয়া প্লেট তলিয়ে যাচ্ছে। এটিকে বলে ‘সাবডাকশান জোন’।
জিপিএসে পরিমাণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর ১ মিটার থেকে দেড় মিটার সংকোচন হচ্ছে। সে হিসাবে এখানে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। যে কোনো সময় এ ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা নগরী। অপরিকল্পিত শহর এবং বিল্ডিং কোড মেনে অনেক স্থাপনা নির্মাণ না হওয়ায় এখানকার ১ শতাংশ বিল্ডিংও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে দুই লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটবে। ৫-৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে আটকা পড়বে।
১৭৬২ সালে ‘গ্রেট আরকান আর্থকোয়েক’-এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এতে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত ভূমিকম্প ছিল ৮ দশমিক ৭ মাত্রার। এসব হিসাবেও বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।
২০০৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ দেশে ভূমিকম্প হলে তার প্রস্তুতি নেয়া । বর্তমানে ১২ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, যে কোটি কোটি টাকা বাজেট আছে, এর ১ শতাংশও যদি স্মার্টফোনে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড গেম চালু করা হয়, তাহলে তিন থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে সবাই এটি শিখে যাবে। ভূমিকম্প হলে ঘরের ভেতরে থাকলে কী করতে হবে। কীভাবে আশ্রয় নিতে হবে, বাইরে থাকলে কী করণীয়-এসব শিখে নেবে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে কোনো শিক্ষা নেই। সরকারের নেই কোন প্রস্তুতি ।