ঢাকাবাসী কী আদৌ নির্মল বাতাস উপভোগ করতে পারবেন?

অপরিশোধিত পানি সংকটে নাগরিক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ওয়াসার দায়িত্বহীনতা
মো: সাইফুল ইসলাম

বছরে ৩৬৫ দিন ধরলে ৯ বছরে ৩২৮৫ দিন হয়। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৯ বছরের ৩১১৪ দিনের মধ্যে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাস গ্রহণ করেছে রাজধানীবাসী। অর্থাৎ ৩১১৪ দিনের মধ্যে ৩১০৫ দিনই দূষিত বায়ুর মধ্যে জীবন-যাপন করেছে ঢাকাবাসী। এই ৯ বছরে ঠিক কতবার বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বের এক নম্বরে অবস্থান করেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে যারা নিয়মিত খবরের কাগজ, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে চোখ রাখেন তারা কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন বায়ুদূষণে ঢাকা বহুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রায়ই আমরা খবরে দেখি, ঢাকা দূষিত বায়ুর দিক থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিলে মানুষের শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। কঠিন ও জটিল এবং অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

২২ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডল দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) যৌথ উদ্যোগে ‘বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার বায়ুদূষণের যে তথ্য তুলে ধরা হয় তাতে ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠেছে। ক্যাপস চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, ঢাকার মানুষ গত ৯ বছরের মধ্যে ৬২৪ দিন (অর্থাৎ ২০ শতাংশ) মাঝারি মানের বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮ শতাংশ) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭ শতাংশ) অস্বাস্থ্যকর বায়ু, ৬৩৫ দিন (২১ শতাংশ) খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩ শতাংশ) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেছে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে ঢাকায় সবচেয়ে ভালো বায়ু মান ছিল মাত্র দুই দিন। আর সবচেয়ে খারাপ মানে বায়ু ছিল ৩৫ দিন। অর্থাৎ ভালোর চাইতে খারাপের অনুপাত ১৭ গুণ বেশি।

২০২৩ ও ২০২১ সালে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল সবচেয়ে বেশি। গবেষণা থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ৮৬ দিন এবং ২০২৩ সালে অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল ১৩৩ দিন। একই বছর দুর্যোগপূর্ণ বায়ু ছিল ১৪ দিন। এই চিত্র নাগরিকের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর, প্রায়ই প্রশ্ন তৈরি হয় ঢাকাবাসী কী আদৌ নির্মল বাতাসে বসবাস করতে পারবেন? বায়ু পরিচ্ছন্ন বা নির্মল রাখার চেষ্টাটা করতে হবে সম্মিলিতভাবে। এটা একা একা সরকার বা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে চেষ্টা করলে তাতে সফল হওয়া যাবে না। নাগরিকরা সচেতন না হলে, সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালালে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।

যেমন ধরুন, আমরা যারা ঢাকা বা দেশের যে কোনো স্থানে ভবন নির্মাণ করি, সেই নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশে ধুলাবালি জমে বাতাসে তা মিলে যায়, আশপাশের বাসাবাড়িতেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু ভবন মালিক বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল হোন তাহলে তিনি ওই ভবনের আশপাশে যাতে কেউ ক্ষতির শিকার না হন সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু বা সিমেন্টের কাজ শেষ করার পর প্রতিদিনই ওই স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে বাষুদূষণ হবে না। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সিরিয়াস হওয়া জরুরি।

Leave a Reply

scroll to top