ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায়, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মির্জাপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি ওইদিন থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ না নেওয়া এবং ঘটনা চেপে রাখার প্রবণতা দেখানোর কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
এসপি মিজানুর রহমান আরও জানান, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয়। তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায়
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন
- মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯)
- শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজ (৩০)
- ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি এবং ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, বাসে নারী যাত্রীদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন এসপি মিজানুর রহমান।
১৭ ফেব্রুয়ারি কি হয়েছিল রাজশাহীগামী সেই বাসে?
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে মির্জাপুর এলাকায় তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শ্লীলতাহানি করা হয় দুই নারী যাত্রীর। পরে যাত্রীরা বাসটি আটকে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তা চায়।এ সময় বাস যাত্রীদের হাতে আটক বাসচালক বাবলু, সুপারভাইজার মাহবুব ও হেলপার সুমনকে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তবে ঘটনাস্থল টাঙ্গাইল জেলায় হওয়ায় সেখানে মামলা করার পরমার্শ দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম। পরে কেউ মামলা না করায় পুলিশ ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে পাঠালে জামিনে মুক্ত হন সবাই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সময়মতো অবহিত না করায় ওসি সিরাজুল ইসলামকে শুক্রবার ক্লোজড করে পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।