‘আমি শুধু একটি বাড়ির মালিক হতে ও ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই আমার কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই।’মিয়ানমারের একটি খামারে কাজ করা জেয়া (ছদ্মনাম) এ কথাগুলো জানান।
নিজের ছোট্ট পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছিলেন না।
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বেড়েছে। ইউএনডিপির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছিলেন। ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে অর্ধেকে পৌঁছেছে।
জেয়া (ছদ্মনাম) স্থানীয় এমন কয়েকজনকে চিনতেন, যাঁরা তাঁদের একটি করে কিডনি বিক্রি করেছিলেন। তাঁদের দেখে জেয়ার কাছে অনেকটা সুস্থই মনে হতো। আর সে কারণে তিনিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন নিজের কিডনি বিক্রি করতে।
ডব্লিউএইচওর হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।
অন্যদিকে মিয়ানমারে অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে কোনো পরিবারকে তার সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্ত করাতে হয়। জেয়া জানান, ওই দালাল একটি জাল নথি তৈরি করেছিলেন। তাতে জেয়ার নাম কিডনিগ্রহীতার পরিবারের সদস্যদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়।
জেয়া বলেন, কিডনি দান করলে তাঁকে ৭৫ লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি উত্তর ভারতে গিয়েছিলেন। বড় একটি হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়।
আত্মীয় সেজে কিডনি দান করেছেন মিয়ো উয়িনও,
উয়িন বলেন, তাঁকে বলতে বলা হয়েছিল যে তাঁর এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রহীতার বৈবাহিক সম্পর্ক আছে। তা ছাড়া একজনকে তাঁর মা সাজানো হয়েছিল।
উয়িন জানান, ওই অর্থের ১০ শতাংশ দালালকে দিতে হয়েছে। জেয়া ও উয়িন দুজনই বলেছেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।
অস্ত্রোপচারের ছয় মাস পর মিয়ো উয়িন বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তাঁর ঋণের একটা বড় অংশ শোধ করতে পেরেছেন। তবে পুরোটা পারেননি। অস্ত্রোপচারের পর পেটের কিছু সমস্যায় ভুগছেন বলেও জানালেন।
কিডনি বিক্রি করা নিয়ে তাঁর মধ্যেও নেই অনুশোচনা। তবে অন্যদের এটা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এটা ভালো নয়।’