বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

পৃথিবী কাঁদছে—আমরা শুনতে পাচ্ছি কি?

New-Project-64.jpg

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

একটি ক্ষীণ পাখির ডাক, শিশুর নিঃশ্বাসে বিষ, নদীর জলে ভেসে থাকা মৃত মাছ, কিংবা গিলে ফেলা প্লাস্টিকে মৃত্যুবরণ করা কচ্ছপ—এসব কি আমরা দেখতে পাচ্ছি? শুনতে পাচ্ছি? নাকি শহরের কংক্রিটে বন্দি হয়ে আমরা নিজেরাই নির্বাক? একদিন হয়তো আমাদের নাতিরা জিজ্ঞেস করবে—“দাদু, নদী বলতে কী বোঝায়?” আমরা কি চোখ নামিয়ে বলব, “সোনামণি, একসময় মানুষ জলছবির মতো পরিষ্কার নদী দেখত, কিন্তু আমরা সেগুলো প্লাস্টিকে ভরে দিয়েছি”?

আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। কিন্তু এ যেন আর কেবল সচেতনতার দিন নয়—এ যেন এক অ্যালার্ম, শেষ সিগন্যাল। এবারের প্রতিপাদ্য: “প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করুন”—এই বাক্য শুধু আহ্বান নয়, এটা যেন এক চিৎকার, এক আর্তনাদ।

যে পৃথিবী আমাদের জন্ম দিয়েছে, তাকে কি আমরা হত্যা করছি?

১৯৭৩ সাল থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে এই দিনের তাৎপর্য যেন আরও জরুরি, আরও সংকটময়। প্লাস্টিক এখন আর শুধু একটি বস্তুর নাম নয়, এটি একটি নীরব খুনি। সমুদ্রের বুকে প্রতিদিন ১ কোটিরও বেশি টন প্লাস্টিক জমছে। বাচ্চা ডলফিন গিলে ফেলছে চিপসের প্যাকেট। গুলশানের লেকে মাছ মরছে, কক্সবাজারের সৈকতে ডেড জেলিফিশ পড়ে আছে—এই কি সেই পৃথিবী?

বাংলাদেশের গল্পটাও খুব আলাদা নয়

আমরা গর্ব করি—আমরা প্রথম দেশ যারা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু এখন? রাজধানীর নর্দমা, নদী, খাল—সব জায়গায় প্লাস্টিকের দখল। প্রতি ঈদে লাখ লাখ প্লাস্টিকের প্যাকেট উড়ছে আকাশে। গ্রামের শিশু থেকে শহরের ধনী পর্যন্ত সবাই জড়িত এই অপরাধে, হয়তো না বুঝে, হয়তো ইচ্ছে করেই।

পরিবেশ অধিদপ্তর আজ কিছু সেমিনার করছে, কিছু সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো হয়েছে। কিন্তু শুধু কি এসবেই হবে? আমরা কি নিজের ঘরে, নিজের বাচ্চার হাত থেকে প্লাস্টিকের বোতলটা সরাতে পারছি?

মাইক্রোপ্লাস্টিক: আমাদের শরীরেও ঢুকে পড়েছে “নীরব মৃত্যু”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা প্রতিদিন খাচ্ছি প্রায় একটি ক্রেডিট কার্ড সমপরিমাণ প্লাস্টিক—খাবারের মাধ্যমে, পানির মাধ্যমে, এমনকি বাতাসের মাধ্যমেও। ভবিষ্যতে শিশুরা জন্ম নেবে এমন শরীর নিয়ে, যাদের রক্তে থাকবে মাইক্রোপ্লাস্টিক। ভাবুন, এক শিশুর প্রথম নিঃশ্বাসে যদি প্লাস্টিক থাকে, তাহলে আমরা কেমন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি?

তবু আশার আলো আছে, যদি আজই পরিবর্তন শুরু করি

পরিবর্তন আসবে বড় সিদ্ধান্তে নয়, ছোট ছোট প্রতিজ্ঞায়। একদিন বাইরে গেলে প্লাস্টিকের বোতলের বদলে ব্যবহার করুন নিজের পানির বোতল। বাজারে গেলে কাপড়ের ব্যাগ নিন। বাচ্চাকে বোঝান, প্লাস্টিক খেলনা নয়—প্রকৃতিই সবচেয়ে সুন্দর খেলনা। এই পরিবর্তন হয়তো ছোট, কিন্তু এর প্রতিধ্বনি যাবে বহু দূর, হয়তো পৌঁছাবে সেই শিশুর কানেও, যে আজও গাছের ছায়ায় জন্ম নিতে চায়।

Leave a Reply

scroll to top