২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ

বাজেটে কোন পণ্যের দাম বাড়বে-কমবে?

Infographic showing price changes of products in Bangladesh’s 2025-26 budget
মুহাম্মদ নূরে আলম

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন। সোমবার (২ জুন, ২০২৫) বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনি এই বাজেট উপস্থাপন করেন।

বাজেট বক্তৃতার শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, “২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং নৈরাজ্য দূর করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কঠিন দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, “আমি স্বস্তি ও আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, মাত্র ১০ মাসেরও কম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এই লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম, তা খুব শীঘ্রই ইনশাআল্লাহ পূরণ করতে সক্ষম হব।”

বাজেটের মূল বিষয়

বাজেটে কৃষি খাতে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেটে দাম বাড়বে

নিম্নলিখিত পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে:

  • সিগারেট, অনলাইন কেনাকাটা, রড, সাবান-শ্যাম্পু, দেশে তৈরি মোবাইল ফোন, গৃহস্থালি প্লাস্টিক সামগ্রী
  • এলপিজি, দেশে তৈরি এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্ল্যাট, বলপয়েন্ট কলম, হেলিকপ্টার সার্ভিস
  • দেশে তৈরি ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রো ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার-জুসার-মিক্সার-গ্রাইন্ডার
  • দেশে তৈরি ইলেকট্রিক কেটলি-ইস্ত্রি, রাইস কুকার-প্রেসার কুকার, ব্লেড, দেশে তৈরি লিফট
  • দেশে তৈরি ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান, ওটিটি কনটেন্ট, বাণিজ্যিক ভবন (কমার্শিয়াল স্পেস)
  • সেলফ-কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, কোটেড পেপার, সুতা, ম্যানমেড ফাইবার
  • স্ক্রু-নাট-বোল্ট, সার্জিক্যাল কিটস, শিপ স্ক্র্যাপস গুডস, সিমেন্ট শিট
  • ক্রেডিট রেটিং সার্ভিস, থ্রি-হুইলার ব্যাটারি, সেটআপ বক্স

বাজেটে দাম কমবে

নিম্নলিখিত পণ্য ও সেবার দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে:

  • চিনি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, আইসক্রিম, ভূমি নিবন্ধন ফি
  • ক্যানসারের ওষুধ, ইনসুলিন, এলএনজি, টায়ার, দেশি তৈরি ই-বাইক
  • মাটির পাত্র, পেপার প্লেটস, কম্পিউটারের দেশে তৈরি বড় মনিটর
  • উড়োজাহাজ ভাড়া, লিথিয়াম-গ্রিফিন ব্যাটারি

বাজেট উপস্থাপনের প্রেক্ষাপট

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার বক্তৃতা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে সম্প্রচারিত হয়। বাজেট প্রস্তাব ৩০ জুন উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে।

১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ১২.৬৫ শতাংশ), যা বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় ০.৮৮ শতাংশ কম, অর্থাৎ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সর্বশেষ ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংসদের বাইরে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। সে বছর ৯ জুন সোমবার তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।

স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অর্থ উপদেষ্টা ও সামরিক আইন প্রশাসকসহ) ৫৩টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি করে বাজেট দিয়েছেন বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১০টি, আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫টি, এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১টি বাজেট উপস্থাপন করেন।

বাজেট প্রক্রিয়া

এবার সংসদ না থাকায় বাজেটের ওপর আলোচনা বা বিতর্কের সুযোগ নেই। তবে, অতীতের রেওয়াজ অনুসরণ করে বাজেট ঘোষণার পরদিন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন। এছাড়া, জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে।

২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। কৃষি খাতে কর সুবিধা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হ্রাস, এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এই বাজেটের মূল ফোকাস। এই বাজেট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম

মুহাম্মদ নূরে আলম (Muhammad Noora Alam) একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা পোস্ট, নয়াদিগন্ত, বিজনেস মিরর এবং শিরোনাম মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে সাব-এডিটর ও কনটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এনভিডিয়া ও দুবাই ওয়ান মিলিয়ন প্রমপ্টার্স থেকে জেনারেটিভ এআই ও প্রমপ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সনদপ্রাপ্ত। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠকবান্ধব, প্রাসঙ্গিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম কনটেন্ট তৈরিতে তার দক্ষতা অনন্য। ব্যবসা, প্রযুক্তি, সমাজ ও সমসাময়িক বিষয়ের উপর লেখালেখিতে তার পারদর্শিতা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ‘স্বপ্নবাজ ফাউন্ডেশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘রেঁনেসা ফাউন্ডেশন’-এর মিডিয়া প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

Leave a Reply

scroll to top