সীমান্তে অস্থিরতা, ১৭ রুটে চলছে অস্ত্র পাচার

New-Project-3.png
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সীমান্তে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারিরা। ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা প্রতিনিয়ত নতুন রুট ব্যবহার করে অস্ত্র প্রবাহিত করছে। সীমান্ত এলাকায় চলমান এই অবৈধ অস্ত্র প্রবাহ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজিবি সূত্রের খবর

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তঘেঁষা অন্তত ১৭টি এলাকা এখন অস্ত্র পাচারের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এলাকা।

বিজিবির পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, অস্ত্র পাচার প্রতিরোধে সীমান্তজুড়ে কড়া নজরদারি ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে বিজিবি। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সন্দেহভাজন চলাচলের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

উদ্ধার হয়েছে বিভিন্ন অস্ত্র

সম্প্রতি এসব এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, ভারতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলে অস্ত্রের চালান আসার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সীমান্তবর্তী কিছু গ্রামে অচেনা লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা সাধারণত রাতের আঁধারে চলাফেরা করে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না। এমনকি কিছু এলাকায় অস্ত্রের গোপন গুদামের সন্ধানও মিলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক চক্রের ঘনঘন উপস্থিতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “অবিলম্বে অভিযান ও নজরদারি না বাড়ালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”

উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া অস্ত্র

এছাড়া, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় বিভিন্ন থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনও উদ্ধার হয়নি। বিজিবি’র তথ্যমতে, সেদিন দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়, যার মধ্যে ৪ হাজার ৩৫০টি উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০টি অস্ত্র।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিহ্নিত করা হচ্ছে কারা এই অস্ত্র ব্যবহার করছে এবং কোথায় লুকিয়ে রেখেছে সেসব তথ্য। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি আরও শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ করতে হলে শুধু অভিযান নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সমন্বয় করে গোয়েন্দা কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে হবে। তা না হলে এই চোরাচালান দেশজুড়ে সহিংসতা উসকে দিতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top