মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। পাল্টাপাল্টি হামলা, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার মৃত্যু এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানির মধ্যে এবার সরব হয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এক্সে (পূর্বের টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় গুতেরেস বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা—এখন যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতির জয় হোক।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন মন্তব্য সরাসরি দুটি দেশকে যুদ্ধের পথ থেকে সরিয়ে আলোচনার দিকে নিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনও এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আজ্যাক হারজকেরই সঙ্গে আলাপ করে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানালেও বলেন, “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ সংযম জরুরি।”
ভয়াবহ হামলা: ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে হারানো
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালায়। এর আওতায় ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা করে। এতে নিহত হন, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি , সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, খাতাম-আল-আনবিয়া হেডকোয়ার্টারের প্রধান গোলাম আলি রাশিদ, আকাশ প্রতিরক্ষা প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ, এছাড়া ইরানের ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে তাসনিম। নিহতদের মধ্যে আছেন ফিজিকস ও নিউক্লিয়ার রিসার্চের অন্যতম শীর্ষ বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি এবং আবদুলহামিদ মিনুচেহর।
এ হামলার জবাবে ইরান ছুড়েছে একাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল। তেল আবিবে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় এক নারী নিহত হন, আহত হন অন্তত ৪৮ জন। ইসরায়েলি জরুরি সংস্থা এমডিএ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বাজানো হয়, লোকজনকে বাঙ্কারে যেতে বলা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারকার সংঘাত পূর্বের ছায়াযুদ্ধ বা ‘প্রক্সি ওয়ার’-এর মতো সীমাবদ্ধ নয়। সরাসরি হামলা এবং শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব হত্যার ঘটনায় এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সক্রিয় না হলে এই সংঘাত গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের শান্তির বার্তা যুদ্ধ থামানোর প্রথম পদক্ষেপ। তবে বাস্তবতা হলো, যদি কূটনৈতিক তৎপরতা দ্রুত শুরু না হয়, তবে এই সংঘাত শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে আগুনে জ্বালিয়ে দিতে পারে, যার পরিণতি হবে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট।