হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী প্রবেশে ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ

New-Project-2025-06-05T191502.604.png

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘তথ্য ও গবেষণার ফলাফল চুরি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই স্থগিতাদেশকে ‘আইন বহির্ভূত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চীনসহ বিভিন্ন দেশ এবং কট্টরপন্থার সঙ্গে অবৈধ সংযোগ রক্ষা করে চলেছে হার্ভার্ড। এই বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তথ্য ও গবেষণার ফলাফল চুরি, সেসবের অপব্যবহারের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট।” বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই স্থগিতাদেশ আপাতত ৬ মাস কার্যকর থাকবে, তবে এর মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।

এই স্থগিতাদেশ এমন এক সময়ে এলো যখন গত সপ্তাহে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল আদালতের একজন বিচারক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর ভর্তি করতে না পারে, সেজন্য তিনি শিগগিরই একটি নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করবেন।

ট্রাম্পের এই স্থগিতাদেশ জারির পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত এর নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তারা একে ‘আইন বহির্ভূত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে বলেছে, “হার্ভার্ড তার বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান অব্যাহত রাখবে।”

প্রসঙ্গত, হার্ভার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম। শিক্ষা ও গবেষণার মান বিবেচনায় এটি বিশ্বের শীর্ষ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। হার্ভার্ডের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বিদেশি, যার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার ৩৮৬ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৬০০ এর বেশি।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই হার্ভার্ডের সঙ্গে তার টানাপোড়েন শুরু হয়। এর আগে, ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর দেয় না’ অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটির শত শত কোটি ডলারের সরকারি-বেসরকারি অনুদান আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

এরপর গত ২২ মে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম ঘোষণা করেন যে তার মন্ত্রণালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ প্রকল্পের বৈধতা বাতিল করবে। এই প্রকল্পের আওতাতেই হার্ভার্ড বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করত। ক্রিস্টি নোয়েমের এই ঘোষণার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে, যার কিছুদিন পরই ট্রাম্প এই স্থগিতাদেশ জারি করলেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চলমান আইনি ও রাজনৈতিক বিরোধের একটি অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এই স্থগিতাদেশের ফলে হার্ভার্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল।

Leave a Reply

scroll to top