আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে বেড়েছে যানজটের আশঙ্কা এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাকাতির আতঙ্ক। প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে এই মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে, যা যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
এবারের ঈদুল ফিতরে মহাসড়ক অনেকটাই যানজটমুক্ত থাকলেও, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু পরিবহন এবং বাড়তি যাত্রীর চাপে যানজটের ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে, এই উদ্বেগের মাঝেও পুলিশ প্রশাসন মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং ডাকাত আতঙ্কের বিষয়ে কড়া নজর রাখছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী সড়ক পথ। এই পথে টাঙ্গাইলের ৬৫ কিলোমিটার অংশ ঈদের সময় যানবাহনের জটলার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। নিরালা সুপার যানবাহনের সুপারভাইজার হাসান আলী জানান, ঈদুল ফিতরে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও, এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি কম রয়েছে, ফলে এবার ঘরমুখো মানুষের চাপ ব্যাপক হারে বাড়বে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের আগে মাত্র দুই দিনের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ মানুষ একসঙ্গে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরবে, যা মহাসড়কে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। তবে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে যানজট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন।
সম্প্রতি এই মহাসড়কে রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটায় যাত্রীদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুড়িগ্রামের যাত্রী ইকবাল এবং সিরাজগঞ্জের মারুফ হাসান উভয়েই রাতে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যাত্রী শফি মিয়া বলেন, “রাতে ও দিনে মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।”
তবে, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল আশ্বস্ত করেছেন যে, মহাসড়কে পুলিশের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি জানান, ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে ছয় শতাধিক জেলা পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া, যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে বিষয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক চেষ্টা করবে। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফও জানিয়েছেন, মহাসড়কে সবসময় মোটরসাইকেল টিম থাকবে এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি নিজেও প্রতিদিন রাতে টহলে থাকেন বলে জানান।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতি এবং পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে ডাকাতি রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খন্দকার ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিটি বাসে মোবাইল ফোন দিয়ে যাত্রীদের ছবি তুলে তা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। যারা রাতে রাস্তায় যাত্রী উঠাবেন, তাদের ছবিও তুলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনে ডাকাত ধরতে সহায়তা করবে। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যমুনা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানিয়েছেন, গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদুল আজহায় সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার জন্য দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ সচল থাকবে। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আগের মতোই প্রস্তুতি রয়েছে। আশঙ্কা আছে এ কারণে আমাদের ঈদের আগে আড়াই থেকে তিন লাখ যানবাহন যায় উত্তরবঙ্গে।” সেতুর ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত সরানোর জন্য দুটি রেকারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম গ্রুপের ম্যানেজার রবিউল আওয়াল দাবি করেছেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের ফোর লেনের ৪২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং মহাসড়কে ফোর লেন চালু আছে। তিনি আশাবাদী যে এবারের ঈদুল আজহায় যানজট হবে না এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি ফিরতে পারবে।
সব মিলিয়ে, ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবে, শেষ পর্যন্ত যানজট কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ডাকাত আতঙ্ক কতটা কমবে, সেটাই দেখার বিষয়।