ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙ্গামাটিতে নেমেছে পর্যটকদের ঢল। সরকারি চাকরিজীবীদের টানা ১০ দিনের (৫ জুন থেকে ১৪ জুন) ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমাচ্ছেন এই পার্বত্য জেলায়। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
শহরের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। রাঙ্গামাটির প্রতীকী ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক এবং আরণ্যক ওয়াটার ওয়ার্ল্ডসহ সবখানেই ভ্রমণপিপাসুদের সরব উপস্থিতি। জেলার সুপরিচিত সাজেক ভ্যালি উপত্যকা ছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। তীব্র গরম উপেক্ষা করে পর্যটকরা সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ ও সুবলং ঝরনায় গা ভিজিয়ে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ঈদের ছুটি এখনো হাতে থাকায় আরও অনেক পর্যটক পাহাড়মুখী হবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছর ঈদ উপলক্ষে সাধারণত ৪-৬ দিনের সরকারি ছুটি থাকলেও এবারই প্রথম ১০ দিনের টানা ছুটি পাওয়ায় পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। এই বাড়তি আগমনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলেও, এ বছর ভারী বর্ষণের কারণে বর্ষা মৌসুমের আগেই হ্রদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ঝিরি-ঝরনাগুলোও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং হ্রদের পানি বাড়ার কারণে এখন হ্রদ ভ্রমণের জন্য এটি উপযুক্ত সময়।
কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ঘোরার মতো অসংখ্য পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ডিসি বাংলো, কেরানি পাহাড়, পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, আরণ্যক, রাঙাদ্বীপ, রাজবন বিহার, চাকমা রাজবাড়ি, গাঙ সাবারাং, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বরগাঙ, রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট, এবং আসাম বস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক।
এছাড়া কাপ্তাই উপজেলার নিসর্গ পড হাউজ, লেকশোর, জুম রেস্তোরাঁ সহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র মুগ্ধ করছে ভ্রমণপিপাসুদের। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা এসব কেন্দ্র পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনা ও নিলাদ্রী রিসোর্ট সহ একাধিক ঝরনাও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের বৃহত্তম উপজেলা বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা-খ্যাত সাজেক ভ্যালিতেও পর্যটকের ঢল নেমেছে বলে জানিয়েছেন রিসোর্ট মালিকরা।
সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাজেকের ছোট-বড় ৯৮টি রিসোর্ট-কটেজ শতভাগ বুকিং রয়েছে এবং সোমবার সকাল থেকে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে, যা বিকেল পর্যন্ত আরও বাড়বে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “৯-১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের মোটেলে ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং রয়েছে। পর্যটকরা আসা শুরু করেছে এবং এটি ১৩ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
রাঙ্গামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, “এবার বেশি পর্যটক আসবে এটা আমাদের ভাবনায়ও ছিল। সেই মোতাবেক আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। আমাদের মোবাইল টিম সবখানে টহলে রয়েছে; গাড়ি, মোটরসাইকেল এমনকি স্পিডবোটেও। পর্যটকদের নিরাপত্তা কিংবা যেকোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে আছি।”