পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের জন্য রেলপথে যাত্রার শেষ দিনের (৬ জুন) অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ। এই বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের এবারের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট সরবরাহ কার্যক্রম। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি এবং দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি।
এবার রেলওয়ে সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে শতভাগ টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে কাউন্টারে না গিয়ে ঘরে বসেই যাত্রীরা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। তবে টিকিট সংগ্রহের প্রতিযোগিতা এবারও ব্যাপক।
রেলওয়ের সূত্র অনুযায়ী, ঈদপূর্ব ৭ দিনের (৩১ মে থেকে ৬ জুন) জন্য প্রতিদিন প্রায় ৩৩ হাজার ৩১৫টি আসনের টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আজকের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৬ জুনের যাত্রার জন্য, যেটি রাজধানী ছাড়ার শেষ ঈদযাত্রার দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে।
টিকিট সংগ্রহে হিমশিম যাত্রীরা
অনলাইন টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। রেলওয়ের সার্ভারে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। গত কয়েকদিনে প্রতি দিনের টিকিট বিক্রির সময় সার্ভারে গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি হিট পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব হাসান বলেন, “সকালে ঠিক ৮টায় লগইন করেছিলাম। ৫ বার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আসন পাচ্ছি না। পেমেন্ট যাচ্ছিল না, আবার কখনো দেখাচ্ছে ‘সিট নেই’।”
যাত্রীদের জন্য রেলওয়ের নির্দেশনা
রেলওয়ে জানায়, প্রতিটি যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ ৪টি আসনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এ টিকিট রিফান্ডযোগ্য নয়, অর্থাৎ একবার কেনা হলে তা ফেরত দেওয়া যাবে না। টিকিট কেনার পর যাত্রীরা বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারছেন।
নিরাপত্তা ও বিশেষ ট্রেন পরিকল্পনা
রেলওয়ে জানিয়েছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রেলস্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি রোধে স্টেশন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ চাপ পড়া রুটগুলোতে কয়েকটি অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে, যার তালিকা শিগগিরই জানানো হবে।
ঘরমুখো মানুষের অপেক্ষা
ঈদ মানেই নাড়ির টান, প্রিয়জনের কাছে ফেরা। আর সেই ফেরার একমাত্র স্বস্তির মাধ্যম অনেকের জন্য ট্রেন। তাই শেষ দিনের টিকিট পেতে আজও ভোর থেকে হাজারো মানুষ প্রস্তুত ছিলেন মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে।
কেউ পেরেছেন, কেউ পারেননি—তবু এই প্রচেষ্টা যেন এক অপার অপেক্ষা ও ভালোবাসার গল্প, যা শুধু ঈদেই লেখা হয়।