চলমান উত্তেজনা প্রশমিত করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। আর ঘোষণাটি এসেছে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে।
আজ (১০ মে) ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে।
কীভাবে হলো চুক্তি:
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক (DGMO) ভারতের সমকক্ষকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। এরপরই দুই পক্ষ একটি পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নেপথ্য:
এই শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আগেই যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ট্রাম্প জানান, “দীর্ঘ রাতজুড়ে আলোচনা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়” এই সমঝোতা সম্ভব হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আরও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেন। এই ধরনের দ্রুত সমঝোতা, যেখানে সামরিক অভিযান বন্ধ, রাজনৈতিক ঘোষণা ও সময় নির্ধারিত হয়, তা মার্কিন মধ্যস্থতার সক্রিয়তাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া:
পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, “পাকিস্তান সবসময়ই শান্তির পক্ষে ছিল এবং থাকবে।” তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান নিজের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেই এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
উভয় দেশের সামরিক প্রধানরা আবারও ১২ মে দুপুর ১২টায় ফোনালাপ করবেন, যাতে সমঝোতার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়।
উত্তেজনার প্রেক্ষাপট:
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC), রাজস্থান সীমান্ত এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে টান টান উত্তেজনা চলছিল। যুদ্ধবিমান চলাচল, গোলাবর্ষণ ও সামরিক মুভমেন্টের কারণে দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
বিশ্বের বিভিন্ন পর্যবেক্ষক ও রাষ্ট্রনায়করা যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়া—সবাই এই শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যুদ্ধবিরতি সফলভাবে স্থায়ী না হলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘর্ষের ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।”
কী বার্তা দিলো এই উদ্যোগ?
১. যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো প্রভাব বিস্তারকারী বড় শক্তি।
২. ভারত ও পাকিস্তান এখনও আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে।
৩. যুদ্ধ ও সংঘাতের বাইরে বেরিয়ে শান্তি ও কৌশলগত স্থিতিশীলতাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিশ্লেষণ:
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মাঝে এই যুদ্ধবিরতি কেবল সাময়িক শান্তিই আনবে না, বরং তা অঞ্চলিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সরাসরি মধ্যস্থতা দক্ষিণ এশিয়ায় তার ভূরাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার একটি বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছে।