দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোক বা তাপঘাত জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠছে। চলতি মে মাসে বাংলাদেশের অন্তত ২০টি জেলায় দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, পাবনা, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরে জারি করা হয়েছে তীব্র বা অতি তাপপ্রবাহ সতর্কতা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অন্তত আরও ৫-৭ দিন এই দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, হিটক্র্যাম্প ও হিট এক্সহস্টনের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
হিটস্ট্রোক কী ও কীভাবে হয়?
হিটস্ট্রোক হচ্ছে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যখন ব্যর্থ হয় তখন শরীরের তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। এটি হলে দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে—এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
- তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
- গা গরম হয়ে যাওয়া, ঘাম না হওয়া
- বিভ্রান্তি, অসংলগ্ন কথা বলা
- ত্বক লাল ও শুষ্ক হওয়া
- দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি
- অচেতন হয়ে যাওয়া
বিপদে কারা?
- ৫ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা
- বাইরে খোলা রোদে কাজ করা শ্রমিক, রিকশাচালক, হকার, নির্মাণশ্রমিক
- শারীরিক অসুস্থতায় ভোগা মানুষ (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা)
- শিক্ষার্থীরা যারা দুপুরের দিকে স্কুল বা কোচিং থেকে ফেরে
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুবাইয়াত হোসেন বলেন, “এই গরমে বাইরে বেশি সময় থাকা উচিত নয়। পানিশূন্যতা এড়াতে তরল খাবার ও পানি বারবার খেতে হবে। অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত ছায়াযুক্ত বা শীতল স্থানে নিয়ে যাওয়া জরুরি।”
করণীয় – কীভাবে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পাবেন?
- দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন
- ডাবের পানি, শরবত, ফলের রস, লবণ-পানির দ্রবণ খান
- একেবারে রোদে না গিয়ে ছাতা, টুপি বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে চলুন
- সিল্ক, সিনথেটিক বা গাঢ় রঙের পোশাক এড়িয়ে হালকা, সুতির পোশাক পরুন
- দুপুর ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে রোদে না বের হওয়াই ভালো
- বাসা বা স্কুলে ঠাণ্ডা পরিবেশে শিশুদের রাখুন, প্রয়োজনে ছুটি দিন
প্রশাসনের ভূমিকা জরুরি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সারাদেশে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। স্থানীয় সরকার, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং মালিকপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে—বিকেল বেলায় কাজের সময় কমানো, স্কুল টাইম সাময়িক বন্ধ বা পরিবর্তনের মতো ব্যবস্থা নিতে।
বর্তমানে সারা দেশে গরম একটি মানবিক ও স্বাস্থ্যগত সংকটে রূপ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি সচেতনতা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির সমন্বয় ছাড়া বড় বিপদ এড়ানো কঠিন হতে পারে।