যে কারণে ইরানে হামলা করেছে ইসরায়েল

New-Project-2025-06-13T195451.988.png
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত আটটি শহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। আজ শুক্রবার (১৩ জুন) হওয়া এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’। এই হামলা আকস্মিক মনে হলেও, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ বিদ্যমান, যার মূল কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যেই ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারে। তাদের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্প নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং এই কর্মসূচি থামাতে সামরিক হামলাকেই তিনি একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেখছেন।

গত বছর অক্টোবরে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অভিজাত শাখা ‘দ্য রেভোলুশনারি গার্ড’ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যদিও আইডিএফের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের পরমাণু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যা ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করলেও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করে।

সাম্প্রতিক এক মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরের হামলার ‘সাফল্যকে’ পুঁজি করেই নেতানিয়াহু ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই হামলার স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হলো ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করা এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো ইরানে ক্ষমতাসীন কট্টর ইসলামপন্থি সরকারের পতন ঘটানো।

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরায়েল ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানের কট্টর ইসলামপন্থি সরকার প্রকাশ্যে ঘোষণা করে আসছে যে, বিশ্বের মানচিত্র থেকে ইসরায়েলকে মুছে ফেলা তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মদদ দিচ্ছে, যার মধ্যে ইয়েমেনের হুথি, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ উল্লেখযোগ্য। এসব গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা এবং তেহরান নিয়মিত এসব গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরে ইরানের মদদপুষ্ট এই গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আসছিল। তবে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত হামলার পর গাজায় যখন আইডিএফ সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন হুথি এবং হিজবুল্লাহ নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গাজায় অভিযানের পাশাপাশি গত বছর ইসরায়েল ইয়েমেন ও লেবাননে বিমান অভিযান চালিয়ে এই দুই গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে ইসরায়েল। এছাড়াও, বর্তমানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বেশ কোণঠাসা। টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অভিযান পরিচালনা এবং সেখানে আটক সব জিম্মিকে এখনো উদ্ধার করতে না পারায় ইসরায়েলে তার প্রতি জনসমর্থন কমছে।

এমনকি সম্প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে আগাম নির্বাচনের জন্য বিল জমা পড়েছিল এবং সেই বিলের ওপর ভোটাভুটিও হয়েছিল। খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে নেতানিয়াহু সে যাত্রায় টিকে গিয়েছিলেন।

এসব দিক বিবেচনা করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করা এবং ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে নেতানিয়াহু এই সময়কে ইরানে হামলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেছেন।

Leave a Reply

scroll to top