কোরবানির মাংস বণ্টনে নবীজির আদর্শ

New-Project-2025-06-06T125514.291.png

কোরবানির মাংস বণ্টন। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামীকালই মুসলিম উম্মাহ’র পরম আনন্দের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এই দিনে সামর্থ্যবান মুসলিমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেবেন। কোরবানি কেবল একটি ইবাদত নয়, বরং এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) প্রতি শর্তহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নবীজি (সা.) নিজেও নির্দেশিত হয়েছেন, “আপনি আপনার রবের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি দিন।” (সুরা কাউসার: ২)।

কোরবানি করা পশুর মাংস কীভাবে ভাগ করা হবে, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ ও অন্যের প্রতি সহমর্মিতা। এই মূলনীতি মেনেই নবীজি (সা.) কোরবানির মাংস বণ্টন করতেন, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ।

পবিত্র কোরআনে কোরবানির মাংস বণ্টনের একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা সুরা হজের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেন, “আর (কোরবানির) উটগুলো আমি করেছি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। তাতে তোমাদের জন্য কল্যাণ আছে, কাজেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় এগুলোর ওপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। যখন তা পার্শ্বভরে পড়ে যায়, তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও—যে কিছু চায় না তাকে এবং যে চায় তাকেও। এভাবে আমি এগুলো তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”

এই আয়াত থেকে ইসলামবিষয়ক গবেষকরা কোরবানির মাংসকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করার ইঙ্গিত পেয়েছেন:

এক ভাগ নিজেদের জন্য: কোরবানিদাতা নিজে এবং তার পরিবার এই অংশ থেকে আহার করবে। এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের জন্য: যারা নিজেদের প্রয়োজনে চাইতে পারে না, কিন্তু হকদার, তাদের এই অংশটি দেওয়া হবে। এক ভাগ অভাবী ও দরিদ্রদের জন্য: যারা দরিদ্র, ফকির-মিসকিন এবং যারা চেয়ে থাকে, তাদের এই অংশটি দান করা হবে।

ইসলামী পণ্ডিতদের মতে, কোরবানির পশুর মাংস উল্লিখিত তিন ভাগে ভাগ করা মোস্তাহাব ও উত্তম। নবী করিম (সা.) নিজেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারের সদস্যদের খাওয়াতেন, এক-তৃতীয়াংশ গরিব প্রতিবেশীদের খাওয়াতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ ভিক্ষুকদের দান করতেন (আল-মুগনি: ৯/৪৪৯)।

কোরবানির অন্যতম লক্ষ্য হলো সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ। বছরে অন্তত একটি দিন যেন তারাও মাংস-ভাত খেতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা কোরবানিদাতাদের কর্তব্য। যদিও কোরবানিদাতা ইচ্ছে করলে পুরো মাংস নিজেই খেতে পারেন, তবে কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অন্যের মুখে হাসি ফোটানো।

আসন্ন ঈদুল আজহায় নবীজি (সা.)-এর এই আদর্শ অনুসরণ করে মাংস বণ্টনের মাধ্যমে আমরা যেমন সওয়াব অর্জন করতে পারব, তেমনি সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে পারব। এটিই কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং সৌন্দর্য।

Leave a Reply

scroll to top