ঈদের আনন্দের ছোঁয়া, কিন্তু আড়ালে লুকানো নীরব কষ্ট

New-Project-16.jpg

ঈদের আনন্দের ছোঁয়া, কিন্তু আড়ালে লুকানো নীরব কষ্ট

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

ঈদ মানেই বাংলার মানুষের জীবনে আনন্দের এক মহোৎসব। চারপাশে নতুন জামাকাপড়, মিষ্টির সুগন্ধ, ঘরে ঘরে হৈ-হুল্লোড় আর স্বজনদের মিলনমেলা। কিন্তু এই ছড়ানো হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক নীরব কষ্টের ছবি, যা অধিকাংশ সময়ই চোখে পড়ে না। শহরের কোণাকুণায়, আধুনিক জীবনের দ্রুতগামী ধুলায়, একাকীত্বের সেই গভীরতা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বহু মানুষ ঈদের আনন্দ থেকে দূরে, নিঃসঙ্গতা আর মানসিক অবসাদের শিকার।

বিশেষ করে শহুরে জীবনে পরিবার-বাড়ির আলিঙ্গন কমে আসছে, প্রগতিশীলতা ও বেকারত্বের সঙ্গে মানসিক চাপের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই ঈদের আগমনে প্রত্যাশা করেন দূর থেকে আগত আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা, কিন্তু বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায় একাকীত্বের কঠিন বাস্তবতা। বৃদ্ধরা যাদের সন্তান-নাতি বিদেশ বা অন্য শহরে থাকে, তারা অনেক সময় ঈদেও নিঃসঙ্গতা বরণ করেন। তাদের চোখে দেখা ঈদ শুধু একাকীত্বের প্রতিচ্ছবি, আর মনের ভেতরে বাজে এক নিঃসন্দেহ শূন্যতা।

করোনা মহামারির সময় একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল। বহু মানুষ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, এবং এই পরিস্থিতি এখনো অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি কাটেনি। আর্থিক সংকট ও বেকারত্বের কারণে অনেক পরিবারের জন্য ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ। নতুন পোশাক কেনা, মিষ্টি খাওয়া বা পরিজনের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো অনেক সময়ই বিলাসিতা মনে হয়, যখন বাসা-ঘরের চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে।

ঈদ শুধু আনন্দের নয় মানসিক সুস্থতার দিনও

ঈদ শুধু আনন্দের দিন নয়, একে মানবিক সহানুভূতি ও মানসিক সুস্থতার দিন হিসেবেও দেখা উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ ও একাকীত্বকে কমাতে পরিবার ও সমাজকে আরও আন্তরিক ও সচেতন হতে হবে। পরিবারের অভ্যন্তরে বোঝাপড়া বাড়ানো, বৃদ্ধ ও একাকী মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, ফোন-ভিডিও কলের বাইরে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ করতে হবে।

সামাজিক সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলোকেও দরিদ্র ও একাকী মানুষের জন্য ঈদে বিশেষ কার্যক্রম নিতে হবে, যেন কেউ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না থাকে। সামনের দিনে আমাদের সমাজে ঈদ হবে শুধু উৎসব নয়, বরং মানবিক সম্পর্কের পুনর্জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

অতএব ঈদ মানে শুধু বাহ্যিক রঙিন সাজ-গোজ বা বড় আয়োজনে সীমাবদ্ধ না থেকে, অন্তর্নিহিত মানুষের অনুভূতি ও মানসিক অবস্থা বোঝা, একে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং সত্যিকার অর্থে সবাইকে একত্রিত করার মহৎ প্রয়াস হওয়া উচিত। ঈদের প্রকৃত মাহাত্ম্য তখনই পূর্ণ হবে, যখন প্রত্যেক মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, হৃদয়ে ভালোবাসা জাগবে এবং একাকীত্বের অন্ধকার ছড়ানো থাকবে না।

Leave a Reply

scroll to top