মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কয়েকদিনের টানা পাল্টাপাল্টি হামলায় ইতোমধ্যে ইরানে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩০ জন। ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই সাধারণ মানুষ। অপরদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানি হামলায় তাদের দেশে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসলেও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলের আগাম হামলার জবাব না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো আলোচনায় যাবে না। কাতার ও ওমানের মাধ্যমে ইরান এই বার্তা দিয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে এবং এতে অনেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এমনকি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকেও লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা ছিল বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর বিরোধিতা করেন।
শনিবার রাতে ইসরায়েল তেহরানে অন্তত ৮০টি স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল তেল ডিপো, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বেশ কিছু সরকারি ভবন। এছাড়া ইরানের খুজিস্তান প্রদেশেও হামলা চালানো হয়। এদিকে ইরানও পাল্টা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি, জ্বালানি কেন্দ্র লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটিও নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ভারত জানিয়েছে, তারা ইরান ও ইসরায়েলের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস দেশটিতে থাকা ১,৫০০-এর বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং অনেককে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করছে।
এদিকে কানাডায় শুরু হয়েছে জি-৭ সম্মেলন, যেখানে এই সংঘাত অন্যতম আলোচ্য বিষয়। জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে এবং ইসরায়েল যেন আত্মরক্ষার অধিকার বজায় রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমি চাই একটি চুক্তি হোক। তবে কখনো কখনো তাদের লড়াই করতে হয়, তারপর সমঝোতা হয়। দেখা যাক কী হয়।”
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের চোখ এখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ বড় পরিসরে গড়ালে তা পুরো অঞ্চলকে জড়িয়ে ফেলতে পারে।