ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা রীতিমতো যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। একের পর এক পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে দুই দেশের নাগরিক জীবন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক হামলায় ইরানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২২৪ জনের, অন্যদিকে ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছে ২৪ জন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন ইরান থেকে প্রায় ১০০–১৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একযোগে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ছোড়া হয়। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল রাজধানী তেল আবিব, হাইফা ও জেরুজালেমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর। ইসরায়েলের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং বহু স্থানে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজতে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করা হয় বলে দাবি করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)।
জবাবে, ইসরায়েল ব্যাপক পাল্টা হামলা চালায় ইরানের সামরিক স্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের ওপর। রাজধানী তেহরানে কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ প্রদেশের একটি হাসপাতালেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। এছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আইআরআইবি’র অফিসেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ইরানি সংবাদমাধ্যম।
এই হামলার মধ্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মসাদের গোপন অভিযানের খবর। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ইসরায়েল ইতিমধ্যে ইরানের ভেতরে অন্তত ৫০০টিরও বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করে রেখেছে, যার মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে। IDF জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোর এক-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহল এ উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জি-৭ নেতারা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে, রাশিয়া ও চীন কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা-পাল্টা হামলার পরিণতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিকেও প্রবলভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি নতুন চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার না হলে, এই সংঘাত আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।