টাকা ছাড়া দৈনন্দিন জীবন প্রায় অচল। খাবার, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুতেই টাকার প্রয়োজন। প্রতিদিন বিভিন্ন হাত ঘুরে টাকা চলে। এভাবে অনেক সময় কোনো নোট ছিঁড়ে যায়। ছেঁড়া নোট বাজারে চলতে চায় না। তখনই শুরু হয় বিপত্তি। দোকানি নোট নিতে চায় না। পেছনে পড়ে থাকে সেই অচল টাকা।
ছেঁড়া টাকা কি বদলানো যায়?
হ্যাঁ, যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সব বাণিজ্যিক ব্যাংক এই সুযোগ দেয়। শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামেও পাওয়া যায় এই সেবা। প্রয়োজন শুধু কিছু নিয়ম জানার।
অনেকেই এই নিয়ম জানেন না। তাই ছেঁড়া টাকা ফেলে দেন। কেউ কেউ ভয় পান সেটা জাল মনে হতে পারে। আসলে এসব নোট পুরোটাই বদলানো সম্ভব, যদি নিয়ম মানা হয়।
নোট বদলানোর শর্ত কী কী?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তিনটি শর্তে নোট বদলানো যায়—
১. নোটের অন্তত ৫১ শতাংশ অক্ষত থাকতে হবে।
২. নোটটি আসল হতে হবে এবং তা সহজে শনাক্তযোগ্য হওয়া জরুরি।
৩. যদি নোট খণ্ডিত হয়, তবে সব খণ্ড একই নোটের অংশ হতে হবে।
নোটের অর্ধেকের কম থাকলে সেটা আর রিফান্ডযোগ্য নয়, তবে ৫১ শতাংশ থাকলে পুরো মূল্য ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া জাল বা নকল নোট কোনোভাবেই গ্রহণ করা হয় না।
কত শতাংশ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী তিনভাবে রিফান্ড দেওয়া হয়:
- ১০০% ফেরত: যদি নোটের ৭৫% বা তার বেশি অক্ষত থাকে।
- ৭৫% ফেরত: যদি ৫০-৭৪% অংশ ভালো থাকে।
- ৫০% ফেরত: যদি ২৫-৪৯% অংশ সঠিক থাকে।
২৫% এর নিচে থাকলে রিফান্ড পাওয়া যায় না।
ব্যাংকে গেলে কীভাবে বদল হবে?
নোট নিয়ে যেতে হবে কাছের যেকোনো ব্যাংকে। ব্যাংক কর্মকর্তা নোটটি দেখে যাচাই করবেন। যাচাই শেষে রিফান্ড দেওয়া হবে।
যদি নোট খুব বেশি ছেঁড়া হয়, তাহলে ব্যাংক সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। সেই ক্ষেত্রে টাকা পেতে সময় লাগতে পারে। তবে রিফান্ডের নিশ্চয়তা আছে।
ঝলসানো বা আগুনে পোড়া নোটের ক্ষেত্রেও কী হবে?
এমন নোটও রিফান্ডযোগ্য, তবে শর্ত সাপেক্ষে। এগুলো সরাসরি ব্যাংকে জমা দিলে, ব্যাংক তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। প্রাপ্তি সাপেক্ষে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
এই নোট পাঠানোর ডাক বা কুরিয়ার খরচ সাধারণত গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হয়।
নোটের পেছনে কাগজ লাগানো যাবে?
হ্যাঁ, তবে সতর্ক থাকতে হবে। দুটি খণ্ড একসঙ্গে জোড়া দিতে হবে। এজন্য পেছনে সরু সাদা কাগজ লাগানো যায়। এতে ব্যাংক বুঝতে পারবে দুটি অংশ একই নোটের।
তবে, জোড়া লাগানো কাগজে অতিরিক্ত আঠা বা রং ব্যবহার করা যাবে না। এতে নোটকে ভুয়া মনে হতে পারে।
সচেতন না থাকলে বিপদ বাড়ে
অনেকেই ছেঁড়া টাকা দেখে ভয়ে ফেলেই দেন। আবার কেউ নোট হাতে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অথচ জানা থাকলে এই ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব।
৫০০ বা ১০০০ টাকার বড় নোট যদি অল্প ছেঁড়া হয়, সেটাও সম্পূর্ণ রিফান্ডযোগ্য। দোকানি না নিলেও, ব্যাংক সেই টাকা নতুন নোট দিয়ে বদলাবে।
আপনার করণীয় কী?
১. ছেঁড়া টাকা ফেলে না দিয়ে সাবধানে সংরক্ষণ করুন।
২. যতটুকু সম্ভব নোটের অংশ অক্ষত রাখার চেষ্টা করুন।
৩. একাধিক খণ্ড হলে পেছনে সাদা কাগজ দিয়ে জোড়া লাগান।
৪. নিকটস্থ ব্যাংকে গিয়ে জমা দিন, ও নিয়ম অনুযায়ী রিফান্ড নিন।
ছেঁড়া টাকা মানেই অচল নয়। নির্ধারিত নিয়ম জানা থাকলে তা থেকে পুরো মূল্য ফেরত পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই পরিষেবা দিচ্ছে নিয়মিত।
অতএব, টাকাকে মূল্য দিন। ছেঁড়া নোট পেলে ভয় না পেয়ে সচেতন হোন। নিয়ম মেনে আপনার পাওনা বুঝে নিন।